রোদচশমা
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
রোদচশমার পেছন থেকে পৃথিবীটাকে ছবির মতো মনে হয়,
মনে হয় যেন এইমাত্র কেউ একখানা রঙিন তুলি দিয়ে,
পৃথিবীর ওপর আঁচড় বুলিয়ে গেছে।
রোদচশমার আড়াল থেকে রাস্তার পাশে কাঁটা ঝোপগুলোকেও বনফুল মনে হয়।
ঠেলাওয়ালা, ফেরিওয়ালা আর রিকশাওয়ালার দল,
কাজ ফেলে ক্রমাগত হাঁপাতে থাকে,
ঘামে ভেজা গামছাটা অনবরত নাড়তে থাকে একটুখানি বাতাসের আশায়।
রোদচশমার চোখ দিয়ে যদি তাদের দেখো,
তবে দেখতে পাবে নীলচে, লালচে কিংবা হলুদাভ রঙিন কিছু মানুষ।
তাদের কপালের ভাঁজগুলো অজানায় থেকে যাবে তোমার চোখে,
তাদের পাঁজরের হাড়গুলো গুনতে পারবে না তুমি কখনো,
রঙিন কাঁচে ওসব ধরা পড়েনা।
যতবার ঐ রোদচশমার আড়াল থেকে যুবতী জননীটিকে দেখতে পাও,
কখনোই তার মুখে বেদনার ছাপ দেখতে পাবে না।
সে যখন ছোট্ট ছেলেটাকে নিয়ে স্কুলে যায়, ফিরে আসে,
বাজারে যায় বা নৈমিত্তিক কাজে,
চশমা তাকে করে রাখবে চিররঙিন।
সে হয়তো তোমার প্রতিবেশী,
তুমিতো তাকে জানোই,
মাঝরাত্তিরে তুমি তার কান্নার শব্দ শুনতে পেয়েছো,
কখনো শুনেছো তার চিৎকার, ঝগড়া, ইনিয়ে বিনিয়ে কতো দুঃখের কাঁদুনি।
সকালে যখনই তাকে দেখবে,
রঙিন কাঁচখানা তার সমস্ত অশ্রুধারাকে অদৃশ্য করে দিয়েছে।
তুমি তাকে চিররঙিন, ঝলমলে দেখতে পাবে,
তার চামড়ার রুক্ষ ভাঁজে ফুটে আছে যে যন্ত্রণার কথকতা,
রঙিন কাঁচে ওসব কখনোই ধরা পড়েনা।
সেদিন যখন তুমি খোলা চোখে বিধবাকে দেখলে,
ধবধবে সাদা শাড়ির পরিচ্ছন্ন আবরণে,
তোমার সম্ভ্রম জেগেছিলো নিশ্চয়।
সেদিন বুঝি দোলযাত্রা ছিলো,
একটু পরেই আবার তাকে দেখলে,
রাস্তার পাশে লজ্জায় জড়োসড়ো, আঁচলে মুখ লুকিয়ে লজ্জা ঢাকার কি নিদারুণ প্রয়াস!
দোলযাত্রীরা তার গায়ে রঙ লাগিয়ে গেছে।
সবাই দেখতে পেলো, সব্বাই,
কেবল তুমিই সাদা আর রঙিনের তফাৎটা ধরতে পারলে না,
পাশ কেটে চলে গেলে নির্দিধায়।
তোমার চোখে ছিলো গাঢ় রঙের একটা রোদচশমা।
রোদচশমাটা যেন মেকাপের মতো,
সত্যকে ঢেকে ফেলে সহজেই।
আরামপ্রিয় মানুষগুলো সত্যকে বরাবর ভয় পায়,
তারা রঙিন পৃথিবীতেই স্বচ্ছন্দ।
তুমিতো এসব জানোই,
তাই রোদচশমাটা তোমার সর্বক্ষণের সঙ্গী।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২ জানুয়ারি ২০২২