বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

শেখ ফাহমিদা নাজনীন এর কবিতা গোলপাতায় ছাওয়া ’

শনিবার, জানুয়ারী ১৫, ২০২২
শেখ ফাহমিদা নাজনীন এর কবিতা গোলপাতায় ছাওয়া ’

গোলপাতায় ছাওয়া 


ছোট্ট গাঁয়ের ভেতর দিয়ে একপায়ে  মেঠোপথটা চলে গেছে ক্ষেত বরাবর, 
পথটার দুপাশে ছোট ছোট খড়ের কুঁড়ে, কাঁচা মাটির ঘরদোর, 
বারান্দা, দহলিজ, তাল, সুপারি আর নারকেলের লম্বা সারি।

গোলপাতার ছাউনি ভেদ করে সূর্য এসে উঁকি দেয় ঘরগুলোতে, 
প্রবল বর্ষণে থৈথৈ স্রোতধারা বয়ে যায়, 
ঘর-বারান্দা আর নিকানো জুড়ে,
গোলপাতার ছাউনি বরাবরই ধরাসায়ী প্রবল বর্ষণের কাছে।

একটু ঝড়েই কাঁচা ইটের দেয়ালগুলো ধ্বসে পড়ে, 
চাপা পড়ে বাসিন্দা কেউ কেউ। 

তোমরা সে সব পত্রিকায় দেখতে পাও,
তোমরা সকালের গরম চায়ের সাথে সচিত্র প্রতিবেদন দেখো
আর উদাস হয়ে যাও। 
মনখারাপের খবরগুলো স্বভাবতই মানুষকে উদাস করে দেয়।
তবে ওসব ও গাঁয়ের নৈত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। 
তোমরা গাড়ি হাঁকিয়ে বনভোজনে যাও,
ওদের ফসলের ক্ষেতের ধারে।
সবুজ ধানের ক্ষেতে বাতাসের দোলা,
তোমাদের প্রাণে কাব্য এনে দেয় । 
তোমরা হলুদ সর্ষে ক্ষেতে লুটোপুটি খাও,
তোমাদের এ্যালবাম ভরে ফেলো হলুদিয়া বিনোদনে,
তোমরা পাখি দেখতে যাও, পাখির গান শুনতে যাও,
ফিরে আসো একরাশ টাটকা সবজি নিয়ে, 
বিদেশ ফেরত ভ্রমণকারীর স্যুভেনির মতো। 
পেছনে ফেলে আসো গাড়ির কালো ধোঁয়া, খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্লাস্টিকের খালি বোতল আর একগাদা ছেঁড়া কাগজ, 
হয়তো ফেলে আসো তোমাদের আজন্ম গচ্ছিত ক্লান্তি। 
অথচ গোলপাতায় ছাওয়া ঐ হাড় জিরজিরে গাঁয়ের 
প্রেতদর্শী মানুষগুলি–
হাজার বছর ধরে ঐ ক্ষেতে তাদের  সর্বস্ব উৎসর্গ করে এসেছে,
প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় ফোটা ফোটা রক্ত বিন্দু যেন ঘাম হয়ে ঝরেছে  ঐ সোনাফলা মাঠে। 
ঐ মাঠ, ঐ সবুজ ধানের ক্ষেতে বাতাসের দোল,
ও যেন তাদেরই রক্তসঞ্চালন। 
ঐ হলুদিয়া সর্ষের ক্ষেতে তুমি কান পেতে শোনো,
তাদের আনন্দ নিনাদটুকু ঠিকই শুনতে পাবে। 
দিগন্তজোড়া ফসলের ক্ষেতের ঠিক মাঝখানে শাপলার বিল।
যেখানে সভ্য সমাজের পরিপাটি মানুষগুলো কখনো যায়না, 
যেখানে পৌঁছাতে হলে কাদায় মাখামাখি হতে হয়,
তোমাদের কেতাদুরস্ত পোশাক যেখানে বেমানান,
সেখানেই ফুটে থাকে অজস্র শ্বেতবসনা শাপলা। 
তাদের দেখলে তোমাদের মনে সংগীত এসে যাবে হয়তো, 
তোমরা কবিতার খাতা খুঁজতে থাকবে অসময়ে। 
অথচ গাঁয়ের লোকের কাছে শাপলার গোছা যেন করুণাময়ের দান।
ভরা বর্ষার ঘোর দুর্দিনে হেঁসেলে চালের ঘাটতি পড়ে গেলে, 
গাঁয়ের লোকেরা শাপলার বিলে ছোটে।
তোমাদের মেয়েরা যখন শাপলার মালা দিয়ে কেশবিন্যাস করে, 
গোলপাতায় ছাওয়া গাঁয়ের মেয়েরা শাপলার ছালুন রাঁধতে বসে। 
শাপলার গোছা যেন করুণাময়ের দান,
ভরা বর্ষার অকালে ভোগা চাষিদের ঘরে।

শেখ ফাহমিদা নাজনীন 
২ জানুয়ারি ২০২২।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল