মন খারাপের মেঘ
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
ও মেয়ে তোমার মুখ ভার কেন? মন বুঝি নেই ভালো?
শরৎ স্বচ্ছ নীলাকাশ কেন মেঘে মেঘালয় হলো?
এইতো সকালে খিলখিল শুনে ঝিলমিল মন নিয়ে,
বাবা চলে গেলো নিত্য কর্মে সুস্থিতে খেয়ে নেয়ে।
তারপরে বেশ একবেলা তুমি বই নিয়ে ছিলে বসে,
মা গেলো রাঁধতে মিষ্টি মেয়েটা যা যা খেতে ভালোবাসে।
তোমার জন্যে হৃদয় অরণ্যে কতো স্বপ্নের ভীড়,
তুমি আছো বলে, সুখে ভরে আছে তাদের ছোট্ট নীড়।
সদা সতর্ক! কি চাও তুমি? কখন কি প্রয়োজন?
সারাদিন ধরে নানা উপাচারে তারই সব আয়োজন।
এতো আহ্লাদে গদগদ মনে আবার কি হলো শুনি?
পাঠে অবহেলা? অসময়ে ঘুম? বকেছে তাই জননী?
বকেছে তবে তো বেশ করেছে সে, কেন করো এতো হেলা?
সময়ের কাজ অসময়ে যায় অপকৃষ্টের মেলা।
যখন পড়তে দুলে দুলে তুমি বর্ণমালার পাতা,
কতো আঁকিবুঁকি রঙ তুলি দিয়ে ভরিয়ে তুলতে খাতা।
মা আদোরে চুল ঘেঁটে দিয়ে যেতো ও ঘরে যাবার পথে,
সূর্যমুখীর পাপড়ি কখনো রাঙাতো তোমার সাথে।
কখনো জমতো কানামাছি খেলা মা-মেয়েতে মিলে বেশ,
সুগন্ধি তেলে খোঁপা বেঁধে দিতো তোমার আদুল কেশ।
শুক্রবারের দিনটাতে যেন পড়ে যেতো ভারি সাড়া,
ঐ দিন বাবা ভুলেই যেতেন অফিস যাবার তাড়া।
সারাদিন ধরে বাবাটার সাথে হুটোপুটি আর গল্প,
সেসব কি তবে অহেতুক ছিলো? দামটা কি তার অল্প?
আজ তুমি কতো বড়ো হয়ে গেছো, গড়েছো নিজের বিশ্ব,
সখা-সখীদের অবাধ চরণ, মা-বাবা সেখানে নিঃস্ব।
ছোট্টবেলার কানামাছি খেলা, রংতুলি ছবি আঁকা,
ছুটির দিনের হুটোপুটি আর গল্পেতে মেতে থাকা,
সাঁঝের বেলায় সুগন্ধি তেলে মাখামাখি করা চুল,
তাতে গুঁজে রাখা রজনীগন্ধা কিংবা জবার ফুল।
এসব কি তবে একেবারে যা তা তোমার রাজ্য প্রাঙ্গণে?
তুমি মেতে থাকো ফোনের অন্দরে, অচেনা চিন্তার অঙ্গনে।
যত দিন যায় সত্য হারায়, বাবা-মাও যায় দূরে,
কপটতা এসে বাসা বেঁধে নেয় জাল বিস্তার করে।
উড়ে উড়ে আসে নতুন মুখোশ বন্ধুত্বের রঙে,
তুমি ফেলে দাও মমতার ডালি, ধরা দাও সেই ঢঙে।
কখনো হারাও গড্ডালিকায়, কখনো তো ভেসে থাকো,
হাবুডুবু খেয়ে জীবন হয়ে যায় জোড়াতালি দেয়া সাঁকো।
তাই বলি, এতো মন খারাপের মেঘ ডেকে এনো নাতো,
মায়ের বকুনি? অমূল্য ধন, নেবে যদি মন পাতো।
ঐ বকুনিতে মিশে আছে শতসহস্র হুংকার,
তাতেই মুছবে বুনো মুখোশের কদর্য টংকার।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৯ জানুয়ারি ২০২২।