শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

শেখ ফাহমিদা নাজনীন এর কবিতা ‘ছায়া’

সোমবার, জানুয়ারী ১৭, ২০২২
শেখ ফাহমিদা নাজনীন এর কবিতা ‘ছায়া’

ছায়া
     -- শেখ ফাহমিদা নাজনীন 

তিরিশ বছর পর, আজ আবার তারা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, 
অথচ এই তিরিশ বছর তারা কখনো কেউ কাউকে ছেড়ে যায়নি। 

তারা একসাথে পার করে এসেছে কতো শীত, কতো গ্রীষ্ম, 
কতো বসন্তের ফুলেল উচ্ছ্বাস! 

যখন গ্রীষ্মের প্রচণ্ড উত্তাপ, 
ছেলেটার রুমাল ভিজে যেতো, মেয়েটার শাড়ির আঁচল, 
পরষ্পরের ঘাম মুছে দেয়া ছিলো অভ্যস্ততা।

বাদলা দিনের সন্ধ্যাগুলোতে,
ছেলেটা ছিলো দ্রুতগামী, বাড়ি ফেরার তাড়া।
তবে বৃষ্টি ভেজার ভয়ে নয়, ঘরে যে আছে তার অভয় হতে। 

ঝড়-বাদলের রাতে মেয়েটা ভয় পেতো,
আর ছেলেটা তা জানতো।

তারা কখনো বৃষ্টিতে ভেজেনি,
বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় ছাদের কার্ণিশে দাঁড়িয়ে, হাতে হাত রেখে, যে বৃষ্টিবিলাস হয়,
ওসব তাদের অভিধানে ছিলোনা। 

অথচ বৃষ্টির রাতে মেয়েটা টিমটিমে  বাতির নীচে বসে, 
জমিয়ে রান্না করতো খিচুড়ি-ইলিশ।
ছেলেটা খেতে ভারি ভালোবাসতো।
ছেলেটা কখনোই একগোছা গোলাপ এনে বলেনি, শুভ বিবাহবার্ষিকী।

কতো বসন্ত চলে গেছে তাদের জীবন থেকে, 
তবু ঘটা করে পুষ্পবিনিময় পর্ব হয়নি তাদের। 
ছেলেটা কখনোই মেয়েটার চুলে গুঁজে দেয়নি স্বর্ণচাঁপার কুঁড়ি। 

অথচ প্রায়ই অফিস ফেরত বুক পকেটে লুকিয়ে নিয়ে আসতো, 
মিষ্টি পানের খিলি, দু'টাকার ছোলা ভাজা, ঝালমুড়ি। 

সেসব হাতে পেলেই মেয়েটার মনে ফুটে উঠতো অজস্র স্বর্ণচাঁপা। 
ছেলেটার একটা অসুখ-বিসুখ হলেই মেয়েটা কাঁদতে বসে যেতো।
মেয়েটা ভারি কাঁদতে পারতো, 
রান্নায় নুন বেশী হলে কান্না, ছেলেটা চোখ রাঙালে কান্না, 
এমনকি দেশের বাড়ির কালো গরুটা মারা গেলেও আকুল হয়ে কান্না। 

ছেলেটা ছিলো ভীষণ কড়া,
ওসব কান্নাকাটিকে গ্রাহ্যই করতো না কখনো, 
মেয়েটা লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতো, ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতো,
আর ছেলেটা সেসব উপেক্ষা করে নিজের কাজে চলে যেতো, 
অথচ ঐ ছিঁচকাঁদুনে বোকাসোকা মেয়েটাকে ছেলেটা ভালোবাসতো।
অবশ্য সেসব কথা তারা কেউ কখনো কাউকে বলেনি।

ভালোবাসা ছিলো তাদের হাড়-অস্থি-মজ্জায়, 
ভালোবাসা ছিলো প্রতিদিনের প্রার্থনার মতো অত্যাবশ্যকীয়।

যেদিন থেকে গুরুজনেরা একসূত্রে  বেঁধে দিয়েছেন,
সেদিন থেকেই তারা ছিলো পরষ্পরের ভবিতব্য। 

তারা জানতো কেউ কখনো কাউকে ছেড়ে যাবেনা, 
তাই দৈনন্দিন ঘাটতিগুলোকে তারা  মানিয়ে নিয়েছিলো, 
মেনে নিয়েছিলো পরষ্পরের সীমাবদ্ধতাকে।

তারা জানতো, তাদের একসাথে থাকতে হবে আমৃত্যু,
তাই উচ্চাকাঙ্ক্ষার ঝাঁপিটাকে তারা কখনোই খোলেনি। 
গত তিরিশ বছর ধরে তারা এই চেষ্টাটাই করে গেছে। 

তিরিশ বছর পর–
ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়, 
সকালের রোদ দেয়ালের পরে লম্বা ছায়া ফেলেছে, 
মেয়েটা চা দিতে এসে তার পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালো,
আচমকা তারা দেখতে পেলো,
দেয়ালের পরে দুটো ছায়া এক হয়ে  একটামাত্র ছায়া হয়ে গেছে। 

শীতের সকালবেলা একটা শিরশিরে অনুভূতি তাদের কাঁপিয়ে দিয়ে গেলো –
এই একাত্ম ছায়াখানা ফিরদাউসের আঙিনায় ঠাঁই পাবে তো এমনই করে? 

শেখ ফাহমিদা নাজনীন 
১০ জানুয়ারি ২০২২।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল