সময় জার্নাল প্রতিবেদক : ‘প্রাপ্ত ফলাফলের চেয়ে অনেক বেশি ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী সনাক্তবিহীন অবস্থায় আছে’ বাংলাদেশে কোভিড-১৯-এর আক্রান্তদের ২০ শতাংশই বর্তমানে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত।
আজ (১৮ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর জেনোম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রজেক্ট-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক (সুপারভাইজার) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ এই কথা বলেন।
গত ৮ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে গত ৮ জানুয়ারি ২০২২ইং পর্যন্ত সংগৃহীত স্যাম্পলের ২০ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এবং ৮০ শতাংশ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট গুণিতক হারে বৃদ্ধি পেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে সম্মানিত উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল, প্রধান গবেষক অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান ও জেনেটিক্স এন্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিষয়ক অধ্যাপক প্রধান গবেষক ডা. লায়লা আনজুমান বানু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই রিপোর্ট বিএসএমএমইউ-এর চলমান গবেষণার ৬ (ছয়) মাস ১৫ (পনের) দিনের ফলাফল। গত ২৯ জুন ২০২১ থেকে ৮ জানুয়ারি ২০২২ ইং পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত সারা দেশব্যাপী রোগীদের উপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। এই গবেষণায় দেশের সকল বিভাগের রিপ্রেজেন্টেটিভ স্যাম্পলিং করা হয়। গবেষণায় মোট ৭৬৯ কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর ন্যাযোফ্যারিনজিয়াল সোয়াব স্যাম্পল থেকে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং এর মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়। বিএসএমএমইউ-এর গবেষণায় ৯ মাস থেকে শুরু করে ৯০ বছরের বয়স পর্যন্ত রোগী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২১ থেকে ৫৮ বছর বয়সের রোগীদের সংখ্যা বেশি। যেহেতু কোন বয়সসীমাকেই কোভিড ১৯-এর জন্য ইমিউন করছে না, সে হিসেবে শিশুদের মধ্যেও কোভিড সংক্রমন রয়েছে।
আরও পাওয়া গেছে, কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের কো-মরবিডিটি রয়েছে যেমন- ক্যান্সার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস তাদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। পাশাপাশি ষাটোর্ধ বয়সের রোগীদের দ্বিতীয়বার সংক্রমণ হলে সে ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকি বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, কোভিড-১৯-এর জেনোম সিকোয়েন্সিং বিশ্লেষণ গবেষণায় জুলাই ২০২১ এ দেখা যায় মোট সংক্রমনের প্রায় ৯৮ শতাংশ হচ্ছে ইন্ডিয়ান বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। ১ শতাংশ হচ্ছে সাউথ আফ্রিকান বা বেটা ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমন, ১ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে আমরা পেয়েছি মরিসাস ভ্যারিয়েন্ট অথবা নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট।
জুলাই ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২১-এর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জিনোম সিকোয়েন্স এ প্রাপ্ত ডাটা অনুযায়ী ৯৯.৩১% ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট, একটি করে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন - আলফা বা ইউকে ভ্যারিয়েন্ট এবং বেটা বা সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট এবং অন্য একটি স্যাম্পল এ সনাক্ত হয় 20B ভ্যারিয়েন্ট, যা SARS-COV-2--২-এর একটি ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট। ৮ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে ৮ জানুয়ারি ২০২২ এ পর্যন্ত সংগৃহীত স্যাম্পলের ২০ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এবং ৮০ শতাংশ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট গুণিতক হারে বৃদ্ধির আশংকা করা যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট-এর চেয়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট-এ অনেক বেশি infection ছড়াচ্ছে বলে প্রতিয়মান। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাসের জেনেটিক কোড এ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট এর চেয়ে বেশি ডিলিশন মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার বেশির ভাগ ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিন রয়েছে। এই স্পাইক প্রোটিন-এর উপর ভিত্তি করে বেশির ভাগ ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। স্পাইক প্রোটিন-এর বদলের জন্যই প্রচলিত ভ্যাকসিনেশনের পরেও ওমিক্রন সংক্রমনের সম্ভাবনা থেকে যায়। এই জিনোম সিকোয়েন্সিং-এ কোনো কোনো ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া ছিলো। তৃতীয়বারের মত সংক্রমন রোগী পাওয়া গেছে। হাসপাতালে ভর্তিরোগী থেকে সংগৃহীত স্যাম্পলে জিনোম সিকোয়েন্স করে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। যেহেতু ওমিক্রন সংক্রমনে মৃদু উপসর্গ হয়েছে, সেটা হাসপাতালে ভর্তি রোগীতে ওমিক্রন না পাবার কারণ হতে পারে। পাশাপাশি মৃদু উপসর্গের রোগীদের মধ্যে টেস্ট না করার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। তাই প্রাপ্ত ফলাফলের চেয়েও অনেক বেশি ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী undetected অবস্থায় আছে। প্রত্যেক করোনা ভাইরাস ভ্যারিয়েন্ট বিপদজনক এবং তা মারাত্মক অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। পাশাপাশি ভাইরাসের নিয়মিত মিউটেশনের আমাদের প্রচলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে। তাই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ টিকা গ্রহণ করতে হবে।
এমআই