সেলিব্রেটি
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
খাবারটা রেখে উঠলে যে বড়ো, রান্না কি খুব বাজে?
রাঁধুনী মেয়েটা সারাদিন খাটে, সারাদিন মরে কাজে।
তবু যদি তার নুন-ঝাল নিয়ে হয়ে যায় কোনো ত্রুটি,
বলবান তুমি, তোমার হাতেই তার কর্মের খুঁটি।
উঠতে বসতে হেনস্থা করো, ধমকে হাঁকাও বাড়ি,
অধিনস্তরা সামনে এলেই মুখখানা করো হাঁড়ি।
অথচ তোমার দেঁতো হাসি দিয়ে বিশ্ব ভোলাও রোজ,
তোমাকেই লোকে সেলিব্রেটি বলে, তোমারই রাখে খোঁজ।
কখন তুমি ঘুম থেকে ওঠো, গ্রিন টি নাকি পানি?
তোমার জন্য কোত্থেকে আসে বোতলবদ্ধ হানি?
তোমার পোশাক কোন কারিগর, কোন সুতো দিয়ে বোনে?
তারকা পাতায় সবাই পড়ে তা, হেডফোন দিয়ে শোনে।
তোমার গাড়ির ড্রাইভার যেন জ্যান্ত রোবট ব্যাটা,
কতো পাপ খেলে গাড়ির অন্দরে, তার মুখ কুলুপ আঁটা।
ফাইলে ফাইলে কতো কি কাণ্ড! জমে টাকার স্তুপ,
কতো কি যে ঘটে গাড়ির ভেতর, ড্রাইভার ব্যাটা চুপ।
সে ব্যাচারা ভারি নিরুপায় হয়ে পেটের দায়ে আছে,
তোমার সকল অসভ্যতা অনুপায় সয়ে বাঁচে।
তোমার বাড়ির দারোয়ান বুড়ো, গ্যাট হয়ে বসে থাকে,
দুশো হাত দূরে দেখলে তোমায় মাটিতে সেলাম ঠুকে।
তুমি তাকে দুটো উর্দি দিয়েছো, জমকালো, প্রকট!
সারামাস তাই-ই ঘুরে ফিরে পরে শীত-তাপ যাই হোক।
করুণা প্রার্থী, দুঃস্থ, ভিখারি, বানভাসি ঘোরে পথে,
শত হাত দূরে বর্জিত তারা, তোমার দূয়ার হতে।
তোমার বাড়ির দারোয়ান যেন হাড়-হাভাতের যম,
আসলে ব্যাচারা পুতুল মাত্র, তুমি দাও তাকে দম।
রাইফেলখানা দু'হাতে নাড়িয়ে, তাড়িয়ে পথের দায়,
বুড়ো দারোয়ান দুই চোখ মোছে অক্ষম আকুলতায়।
তোমার বাড়ির ঠিকে ঝি মেয়েটা রাতভোর হলে আসে,
কাপড় কাচে, বাসন মাজে, সব করে অক্লেশে।
তবু তুমি রোজ গজগজ করো, কিছু মনপুত নয়,
সারা বাড়ি করে ঝাঁ ঝাঁ চকচক, তুমি শুধু ধুলোময়।
তোমার পার্টিতে সেলিব্রেটি আরও করে যায় সব নাশ,
ঠিকে ঝি বেটির সাফ-সুরতে জ্বলে যায় হাঁড় মাস।
কতো অনাচার চোখ পেতে দেখে, মুখ বুজে মানে তারা,
পাছে চলে যায় কাজখানা হায়! সেই ভয় মনে ভরা।
উঠতে বসতে চড়-থাপ্পড়, অযাচিত কতো কথা,
সে সব তাদের সয়ে যেতে হয়, কেউ জানেনা সে ব্যাথা।
হঠাৎ সেদিন সন্ধ্যাবেলায় টিভিটা খুলেই দেখি,
রান্নার শো'এ সেলিব্রেটি তুমি জাজ হয়ে আছো, একি!
কতো রসনীয় প্রশংসা বাণী শোনালে মিষ্টি করে,
অথচ তোমার রাঁধুনী মেয়েটি নিদারুণ ত্রাসে মরে!
পরদিন দেখি খবরের পাতা প্রপঞ্চময় রূপ!
বানভাসিদের খাদ্য দিচ্ছো, আহাঃ সে কি অপরূপ!
সেলিব্রেটি তুমি, তোমাকে নিয়ে বাহির উল্লাসে ভাসে,
মাঝরাত্তিরে, একাকী প্রহরে শান্তি ঘুম কি আসে?
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১০ জানুয়ারি ২০২২