শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

সেই কাজীদা এবং এই কাজীদা

বুধবার, জানুয়ারী ১৯, ২০২২
সেই কাজীদা এবং এই কাজীদা

ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো :

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পরই ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান আর্মীর ৪৯ নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙ্গে দেওয়া হয়। কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার কাজী নজরুল ইসলাম যুদ্ধের ময়দান থেকে সরাসরি কলকাতায় ফিরে আসেন। পিতা কাজী ফকির আহমদ অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন। দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধরতা বিধবা মাতা জাহেদা খাতুনের অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামের বুলবুল পাখি আর শূন্য নীড়ে ফিরেনি। নীড় হারা পাখি আশ্রয় নেয় কলকাতার ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটস্থ বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির অফিসে। আগে থেকেই সেখানে থাকতেন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, মুজাফফর আহমদ, কাজী মোতাহার হোসেন। মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ একটু মিতবাক হলেও বাকী তিনজন কলহাস্যে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির অফিস মাতিয়ে রাখতেন। পরবর্তীতে এঁদের প্রত্যেকেই আপন আপন ক্ষেত্রে অনন্য হয়েছিলেন। মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ফ্রান্সের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হয়েছিলেন৷ জ্ঞান সাধনাকে তপস্যা হিসাবে গ্রহণ করা এই জ্ঞানতাপস 'চলিষ্ণুবিদ্যাকল্পদ্রুম' বা চলন্ত বিশ্বকোষ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। মুজাফফর আহমদ ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হয়েছিলেন। 'কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা' ও 'ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস' বইয়ের রচয়িতা তিনি। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টি তার হাত দিয়েই যাত্রা শুরু করে। 

কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ সরকারের অধীনে সেনাবাহিনীতে চাকরি (শুরু) করলেও পরে রাজদ্রোহী এবং বিদ্রোহী কবি হিসাবে পরিচিত হন। তিনিই বাংলাদেশের জাতীয় কবি।

আর কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যানে (Design of experiments--এর উপর) পিএইচডি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হন। পোস্ট ডক্টরাল থিসিস করার সময় তিনি 'Hussains Chain Rule' তত্ত্বের অবতারণা করেন। মূলত তিনিই বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃত পরিসংখ্যানের শিক্ষক। শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ড. কাজী মোতাহার হোসেনের পুত্র হলেন কাজী আনোয়ার হোসেন। পিতার মত ৮৫ বছর বয়সে নিভৃতচারী এই প্রকাশক ও লেখক গতকাল (১৯শে জানুয়ারি) ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার পুরো নাম ছিল কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। পাঠকগণ তাকে তার নামের প্রথম অংশের সূত্র ধরে 'কাজীদা' বলে ডাকতেন। আজ থেকে শত বর্ষ আগে তার পিতার বন্ধু কাজী নজরুল ইসলামকেও তার গুনমুগ্ধরা 'কাজীদা' বলেই ডাকতেন। 

কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৬৬ সালে সেগুনবাগিচায় সেবা প্রকাশনী নামে নতুন এক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেন। তখন তিনি স্বনামে না-লিখে বিদ্যুৎ মিত্র ছদ্মনামে লেখা শুরু করেন। নূর শব্দের অর্থ আলো, জ্যোতি, বিদ্যুৎ। নূরের (আলো, জ্যোতি, বিদ্যুতের) বহুবচন হল আনোয়ার। হোসেন অর্থ বন্ধু, মিত্র। এ হিসাবে আনোয়ার হোসেনের আক্ষরিক অনুবাদ বিদ্যুৎ মিত্র। লেখক, অনুবাদক এবং প্রকাশক হিসাবে খ্যাতি পেলেও যৌবনের শুরুতে গায়ক ছিলেন। ছিলেন রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী। সংগীত শিল্পী ফরিদা ইয়াসমিনকে তিনি বিয়ে করেন। ফরিদা ইয়াসমিন ছিলেন বিখ্যাত শিল্পী নিলুফার ইয়াসমিন এবং সাবিনা ইয়াসমিনের আপন ভগ্নি। ফরিদা ইয়াসমিন এবং ফরিদা পারভীন দু'জন কিন্তু ভিন্ন মানুষ। ফরিদা পারভীন লালন সংগীত শিল্পী হিসাবে খ্যাতিমান। তার স্বামীর নাম আবু জাফর। 

পাকিস্তান আমলে দস্যু বনহুর এবং দস্যু বাহরাম সিরিজ বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। এই সময়ে, ১৯৬৬ সালে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান সেবা প্রকাশনী থেকে কাজী আনোয়ার হোসেন মাসুদ রানা সিরিজ প্রকাশ করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই মাসুদ রানা সিরিজ লাখো কিশোর এবং তরুণ পাঠকের হদয়ে সাড়া জাগায়। মূলত কাজী আনোয়ার হোসেনের কল্পিত চরিত্র মাসুদ রানা বাংলা সাহিত্যের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে। 

আজ যাদের বয়স ৩৫ থেকে ৬৫ বছর, তাদের মধ্যে মাসুদ রানা সিরিজের বই পড়েনি -- এমন পাঠক পাওয়া দুষ্কর। পথভাড়া বাঁচিয়ে, নাস্তার কামাই করার টাকা দিয়ে হাজারো পাঠক মাসুদ রানা সিরিজ পড়েছে। নেশাগ্রস্তের মত পড়তে গিয়ে কত শত কিশোর তরুন যে পিতামাতার হাতে মার খেয়েছে -- এর কোনো হিসাব নেই। কুয়াশা এবং মাসুদ রানা সিরিজ প্রথম প্রকাশিত হওয়ার ১০ বছর পর আবুল আসাদ লিখতে শুরু করেন থ্রিলার সিরিজ সাইমুম। সাইমুম সিরিজের নায়ক আহমদ মুসা। বুদ্ধিমত্তা, উন্নত চরিত্র, প্রখর ব্যক্তিত্ব এবং প্রত্যুৎপন্নমতিতার জন্য আহমদ মুসা নামের কাল্পনিক চরিত্রটি পাঠকদের মাঝে বেশ প্রিয় হয়। তবে পাঠকপ্রিয়তার বিবেচনায় আবুল আসাদের সাইমুম সিরিজের চেয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের তিন গোয়েন্দা / রহস্য সিরিজের স্থান উপরে। লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক হিসাবেই শুধু নন, চিত্রনাট্যকার এবং সংলাপ রচয়িতা হিসাবেও তিনি ছিলেন  অসাধারণ। সহজ সরল গতিশীল অনুবাদের দিক দিয়ে তিনি একটি নতুন ধারা তৈরি করেছিলেন। সেই ধারা কেউ ভাঙতে পারেনি। খুব সহজে কেউ ভাঙতে পারবে বলে মনে হয় না।

২০শে জানুয়ারি, ২০২২ খ্রি.


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল