বুধবার, জানুয়ারী ১৯, ২০২২
কথা নিয়ে যত কথা
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
আমি কখনো কাউকে কোনো কথা দিয়ে আসিনি,
আমি জানতাম, মানুষের সীমাবদ্ধতা সুনিশ্চিত।
সীমালঙ্ঘনের ইচ্ছা বা সাধ্য কোনটাই ছিলো না আমার।
কথা ভারি বিদঘুটে হয়,
অপূর্ণ কথাগুলো বক্তাকে নিতে পারে হাশরের মাঠে,
রবের বিচার দণ্ডের সামনে দাঁড়াতে খুবই অনিচ্ছুক আমি,
তাই কাউকেই কথা দেবার সাহস হয়নি কখনো।
যে মানুষটা শুভ্র পোশাক পরে, গাঁয়ের মঞ্চে এসে,
কথা দিয়েছিলো,
তোমরা বিশুদ্ধ পানি পাবে, খাদ্য পাবে, কাজ পাবে,
হাসপাতাল গড়ে দেবো গাঁয়ের মধ্যিখানে,
মাঠ থেকে যে রাস্তাটা নাক বরাবর চলে গেছে রেলস্টেশনে,
পিচঢালা হয়ে যাবে, ঝকঝকে, চকচকে, মাত্র ছ'মাসে,
শুধু একবার আমায় যদি রাজা মেনে নাও।
গাঁয়ের মানুষ ছিলো শুদ্ধমতি,
মিথ্যা কথার সাথে জানাশোনা হয়নি তাদের।
তারপর –
কতকাল কেটে গেছে –
গ্রামবাসী এখনো কলেরায় ভোগে পানাপুকুরের পানি খেয়ে,
দু'বেলা দুমুঠো ভাত, তাও ভারি দুরস্ত,
গাঁয়ের হাসপাতাল? স্বপ্নের মতো,
আজও তারা স্টেশনে যায় এবড়ো থেবড়ো রাস্তা পেরিয়ে,
গরুর গাড়ি হাঁকিয়ে।
কথা ভারি তামাশার হয়,
কখনো সখনো বোকাসোকা মানুষগুলোকে উপহাস করে যায় অবলীলায়।
মেয়েটা কখনোই বাবাকে বলেনি,
সিগারেট খেওনা।
শুধু একদিন –
সেদিন খুব অসুখ করেছিলো তার,
হাঁপাতে হাঁপাতে বলেছিলো, এতো ধোঁয়া কেন এ ঘরে?
আমি দম নিতে পারছিনা।
বাবা ফেলে দিয়েছিলেন বিষকাঠি, আর ছুঁয়েও দেখেননি।
কথা ভারি প্রেরণার হয়,
কখনো সখনো সঞ্জীবনী বার্তা হয়ে পৌঁছে যায় প্রিয়জনের মস্তিষ্কে।
মেয়েটা আমার সাথেই পড়তো,
ভারি উচ্ছ্বল আর ছটফটে ছিলো সে।
তার সাথে খুব বেশি সখ্যতা ছিলো না আমার,
তবে দুরত্ব খুব বেশি? তাই বা কি করে বলি,
অবরে-সবরে গল্প কিছু তো হতোই।
রমজানের প্রথম দিনটাতে আমি শুধু বলেছিলাম,
রোজা আমার জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
মেয়েটার হাতে ছিলো কোমল পানীয়,
সে আলতো করে রেখে দিলো টেবিলে।
তারপর –
গোটা রমজান জুড়ে আমি তাকে রোজা রাখতে দেখেছি।
কথা ভারি সংশোধনী হয়,
কখনো সখনো একজন মানুষকে টেনে নিয়ে যায় তার ন্যায়বোধের অস্তিত্বে।
তাই আমাদের কথা হোক হিসাবের,
পরিমার্জিত, শুদ্ধ মানস নিয়ে পরিশীলিত।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১২ জানুয়ারি ২০২২।