মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

শেখ ফাহমিদা নাজনীন এর কবিতা ‘ও পথে ধুলো ওড়েনা’

শনিবার, জানুয়ারী ২২, ২০২২
শেখ ফাহমিদা নাজনীন এর কবিতা ‘ও পথে ধুলো ওড়েনা’

               ও পথে ধুলো ওড়েনা
                                        - শেখ ফাহমিদা নাজনীন 

আবার বন্ধ হলো ইশকুল ঘর,
আবার বন্ধ হলো জানালার শার্সি, লোহার দেরাজওয়ালা কাঠের আলমারি, 
চক, ডাস্টার, কালো লম্বা দেয়াল ঢাকা বোর্ড, 
কাঠের শক্ত দরজাটা ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ তুলে বন্ধ হলো, 
মস্ত তালা পড়ে গেলো তার হাতলে। 
মাস্টার মশাইয়ের বয়সটা আরও খানিক বেড়ে গেলো, 
জুলফিতে পাক ধরলো, ঝুলে গেলো মুখখানা, 
চামড়া কুঁচকে গেলো, কপালে বিষাদের ভাঁজ সুস্পষ্ট। 
আবার ধুলো জমে যাবে চেয়ার, টেবিল আর বেঞ্চের পরে, 
ধুলো জমতে জমতে একটা সময় হয়তো প্রাগৈতিহাসিক হয়ে যাবে। 
লোকে ভুলে যাবে এখানে কেউ কখনো বসে ছিলো, 
এখানে কখনো হৈ-হট্টগোলে স্বরে-অ, স্বরে-আ সুর শোনা যেতো। 
সামনের এক চিলতে মাঠটাতে চোরা কাঁটায় ভরে যাবে, 
কতদিন ঝাঁট দেয়া হবেনা বারান্দায়, 
চড়ুইয়ের সংসার বসবে দেয়ালের পরে, 
মাকড়সার জালে জড়িয়ে যাবে দালানটা,
সারাদিন, সারারাত ধরে ঝিঁঝিঁ পোকার মাতম
আর বাতাসের হুহু হাহাকারে, 
বুকের ভেতর ভয়ের শিরশিরে স্রোত বয়ে যাবে। 
হয়তো একদিন ইশকুল বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে ভয় পাবে পোড়োরা।
একঝাঁক ভিমরুল বাসা বেঁধে থাকবে জানালার একপাশে, ঘরের কোনায়,
সারারাত ছাদের কার্ণিশে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকবে একঝাঁক বাদুড়, 
ডাইনির মতো হাত তুলে ডাকবে ভাঁট আর আশশ্যাওড়ার ঝোপ,সিঁড়ির চারপাশে। 
ফাটল ধরবে দেয়ালে, ধীরে ধীরে খসে পড়বে একটা দুটো ইট, পলেস্তারা, 
ফাটলের ভেতরে দু'একটা গোখরো সংসার পাতলেও অবাক হবেনা কেউ। 
ভর সন্ধ্যেয় শেয়াল ডাকতে থাকবে  ইশকুল মাঠে। 
রাজ্যের জীন-পরী, দৈত্য-দানবের অশরীরী উপস্থিতিতে,
মধ্যদুপুরে দুর্বোধ্য হয়ে উঠবে সাধের পাঠশালা। 
পোড়োরা ভয় পাবে ঐ পথে হাঁটতে, 
দালানের পেছনের পাকা পাকা বেতফল আর টকটক শিয়াকুলের হাতছানিও
তাদের টানতে পারবেনা। 
আবার বন্ধ হলো ইশকুল ঘর, 
আবার ফিরে এলো অকালের দিন। 
পোড়োরা আটকে গেলো ঘরে, চার দেয়ালের অন্তরালে। 
ধীরে ধীরে তাদের হাড়-অস্থি-মজ্জায় জং ধরে যাবে, 
জং ধরা টিনের সেপাইয়ের মতো। 
বাড়ির সামনের মাঠটাতে বেলা গড়ালেই
হাডুডু, কানামাছি আর গোল্লাছুটের ওপর নিষেধাজ্ঞা পড়ে গেলো।
ক্ষুদে ক্ষুদে প্রাণগুলো কি করি, কোথায় যায়, কি করে কাল কাটায় ভেবে ভেবেই, 
নিজেদের ঘরদোরে সন্ধ্যার মহাশ্মশানের প্রাণহীন বিষন্নতা ভরিয়ে তুলবে। 
তাদের পৃথিবীটা হয়ে উঠবে হাজা পুকুর, শ্যাওলা জমা ঘাট, মরা শালিকের ভাগাড়। 
আবার মহামারী হানা দিয়েছে তাদের অঙ্গনে, 
বড়ো বড়ো মাথাওয়ালা মানুষগুলো,
ক্ষুদেদের আটকে দিয়েছে একটা জং ধরা হাজতে।
মহামারী? নাকি অদৃশ্য হাজতবাস? 
কে বেশি শক্তি রাখে? কার বেশি দাপট? 
ক্ষুদে ক্ষুদে পোড়োগুলো সে হিসাব রাখেনা।
তারা শুধু জানে, 
পড়ার টেবিলে আর ছুটির ঘন্টা বাজেনা, 
জানালা বন্ধ থাকে, দরজাও আটকানো, 
ইশকুলের রাস্তাটা থির হয়ে থাকে, বুনো ঝোপে ভরে যায়, 
ও পথে এখন আর ধুলো ওড়েনা।

শেখ ফাহমিদা নাজনীন 
২৩ জানুয়ারি ২০২২।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল