জীবন হক, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
একটা সময় ছিল যখন গরু আর মহিষ দিয়েই হাল চাষ করা হতো। এছাড়া কোন উপায়ও ছিলোনা হাল চাষ করার মতো। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে চাষাবাদেরও এসেছে পরিবর্তন। এখন পশু দিয়ে চাষাবাদ না করে যান্ত্রিক নানা প্রযুক্তির সাহায্যে চাষাবাদ করে থাকে কৃষকরা। কিন্তু ভিন্ন চিত্র দেখা মিললো ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ধন্দোগাঁও গ্রামে। সেখানে ঘোড়া দিয়ে এক ব্যতিক্রমী চাষাবাদ করছেন ভূষন চন্দ্র ও তার স্ত্রী ভানু রাণী।
ঘোরা শখের বশে লালন পালন করে তাতে শোয়ার হয়ে মানুষ যায় এদিক-সেদিক। আবার ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতাও জনপ্রিয় অনেক জেলায়। সৌখিন মানুষরা ঘোড়ার গাড়িতে বসে একটু সময় কাটাতেও পছন্দ করেন। আবার মালামাল টানতেও ঘোড়ার গাড়ী ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করার দৃশ্য সাধারণত দেখা যায়না। কিন্তু ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন কৃষক ভূষণ চন্দ্র আর তাঁর এই হালচাষের কাজে সহযোগিতা করছেন স্ত্রী ভানু রাণী।
কৃষক দম্পত্তির সাথে কথা বলে জানাযায়, এক বছর ধরে ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করে আসছে ভূষণ চন্দ্র। বাজারে গরুর দাম বেশি হওয়ায় গরুর বদলে ২২হাজার টাকা দিয়ে দুটি ঘোড়া ক্রয় করেন। ভূষণ চন্দ্র শুধু নিজের জমিতে চাষাবাদ করছেন না অন্যের জমিতেও টাকার বিনিময়ে চাষ করে দিচ্ছে। এক বিঘা জমি চাষ দিতে নিচ্ছে ৫০০ টাকা। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই বিঘা জমিতে হালচাষ করেন তিনি। এতে করে বাড়তি আয় হচ্ছে কৃষক দম্পত্তির এবং সংসারেও কিছুটা স্বচ্ছলতা ফিরেছে।
কৃষক ভূষণ চন্দ্র জানান, আগে আমাদের গরু ছিলো অভাবের কারণে তা বিক্রি করে দেই। বর্তমান সময়ে এক জোড়া হালের গরু কিনতে গেলে খরচ পড়ে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ওই টাকা দিয়ে ইচ্ছে করলে ছয় জোড়া ঘোড়া কেনা যাবে। তবে প্রথম দিকে ঘোড়াগুলোকে হালের কসরত শেখাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। ঘোড়ায় লাঙল-জোয়াল জুড়ে দিয়ে অনেকবার চেষ্টার পর আয়ত্তে আসে। এখন পুরোদমে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছি।
স্থানীয়রা বলেন, ঘোড়া দিয়ে লাঙল দিলে জমি গভীরভাবে খনন হয়। পাওয়ারটিলার বা মাহেন্দ্র গাড়ি দিয়ে হালচাষ করলে জমি সমান হয় না। ঘোড়ার হাল দিয়ে জমি সমান হয়। এতে পানি ধরে রাখা সহজ হয়।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, কৃষকেরা এখন যান্ত্রিক উপায়ে জমি চাষ করেন। ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করা অপ্রচলিত একটা বিষয়। সময়ের সঙ্গে ঘোড়ার যে ব্যবহার তা উঠে গেছে। কৃষক ভূষণ চন্দ্র নিজের প্রয়োজনে বাড়তি আয়ের জন্য ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ বা মই দেন। তবে কৃষি বিভাগ সব সময় আধুনিক মানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে চাষাবাদ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয় বলে জানান তিনি।
সময় জার্নাল/এলআর