ইমরান মাহফুজ: ঘরে বাইরে অস্থিরতা। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে হাহাকার। কাজ নেই মানুষের। বেকার হচ্ছে প্রতিদিন হাজারো নিরীহ জনতা। পরিসংখ্যান বলছে উচ্চশিক্ষিত বেকারে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এই নিয়ে নেই কারো মাথা ব্যথা। আর ব্যথা থাকারও কথা না, কারণ মাথা দিয়েই চেয়ার নিয়েছে। জুতা দিয়ে মারলেও চেয়ার ছাড়বে না কু...বাচ্চারা!
ফলে চোখের সামনে ভাসছে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক ক্ষেত্রে চরম এক নৈরাজ্য পরিস্থিতির বিরাজমান চেহারা। যে চেহারার ছায়া সরাসরি প্রভাব ফেলছে তরুণদের ওপর। এতে হতাশ তরুণরা মিশে যাচ্ছে বিভিন্ন অসামাজিক ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে, আবার কখনো সাধারণ চিন্তা ও কাজ থেকে হয়ে পড়ছে নিষ্ক্রিয়। হতাশা থেকে হিংস্রতার জন্ম হয়। বীভৎস ঘটনা কেউ ঘটাতে পারে সভ্য ও সুস্থ সমাজে। তার জন্য সেই সমাজ ব্যবস্থা দায়ী।
এইভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। দেশে তরুণদের বিশেষত শিক্ষিত তরুণদের এক বৃহদাংশ বেকার জীবন যাপন করছে এবং সেটা বেড়েই চলছে। দেখা যাচ্ছে উচ্চশিক্ষা এখন আর কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। তরুণরা যত বেশি পড়ালেখা করছেন, তাদের তত বেশি বেকার থাকার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) আঞ্চলিক কর্মসংস্থান নিয়ে এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
একদিকে বয়স শেষ হচ্ছে, অন্যদিকে সবকিছু বন্ধ। এমন অবস্থায় হতাশা এবং মানসিক অবসাদে নুয়ে পড়ছেন তারা। বাড়ছে হতাশা ও বিষাদ। কেননা, অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। এর মধ্যে এরা যুক্ত হয় ছাত্র রাজনীতিতে, যুক্ত হয়ে জড়িয়ে পড়ে মারামারি, হানাহানিতে। নিজের ক্যাম্পাসের/ নিজের বিভাগের শিক্ষার্থীদের কারণে অকারণে (কথিত রাজনীতির কারণে) রক্ত ঝরায়। প্রত্যাশার পদ না পেয়ে হতাশ হয়ে তারাও একদিন হারিয়ে যায় অন্ধকার সাগরে। ঢাবি, জবি, জাবি, চবি ও রাবি- সব জায়গায় একই চিত্র।
এর মধ্যে দীর্ঘ সময় মেয়েরা- বাড়িতে বেকার বসে থাকায় পারিবারিক চাপে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেককেই বসতে হচ্ছে বিয়ের পিঁড়িতে। তাতে ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবন নিয়েও তৈরি হচ্ছে অজানা শঙ্কা। মতের অমিলে ভাঙ্গছে বিয়ে। জীবনের এই বিরাট ক্ষতি পুষিয়ে উঠা সম্ভব হয় না সবার পক্ষে। আর সব চিত্র উঠে আসছে না গণমাধ্যমে। তাই আড়ালে থাকছে হাজারো গল্প। তৈরি হচ্ছে ক্ষত। পিছিয়ে যাচ্ছে পরিবার সমাজ ও দেশ।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের তরুণদের বড় অংশ আবার নিষ্ক্রিয়। তারা কোনো ধরনের শিক্ষায় যুক্ত নন, প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন না, আবার কাজও খুঁজছেন না। দেশে এমন তরুণের হার ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ। মেয়েদের মধ্যে এই হার বেশি, ৪৫ শতাংশের কাছাকাছি। দেখা যায় প্রায় ৫০ লাখ তরুণ বেকার।
এই নিয়ে দেশের নেই কারো ভাবনা। নেই কোন অভিভাবক। হতাশার সাগরে আগামী। যোগ হয়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। মনে রাখবেন টিকে থাকার সব কায়দা হাত ছাড়া হয়ে গেলে আত্মহত্যা ছাড়া উপায় থাকে না। সব হারিয়ে সিটিগোল্ড বাংলাদেশ।
(শিক্ষার্থীদের উচিৎ নিজের মধ্যে বাদানুবাদ কমিয়ে নিজের পরিবার নিয়ে ভাবা। কথিত রাজনীতি/ মিছিলের নামে আপন ক্যাম্পাসে রক্ত নিয়ে খেলা বন্ধ করে পারস্পরিক মিলেমিশে চলা। না হয় বোকা থাকবেন, শাসন করবে অসভ্যরা। আর আপনি হতাশ হয়ে আঙ্গুল চুষবেন। স্বপ্ন মারা যাবে আকালে, ঘুমিয়ে থাকবে আশা নিয়ে মা বাবা)।
লেখক: ইমরান মাহফুজ, কবি ও সাংবাদিক।