ঘুমের রাত্রি
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
আমাদের এইসব ঘুমের রাত্রিগুলি অদ্ভুত!
নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে ডুবে যাই অজ্ঞানতার কোন অতল গহ্বরে,
মুহূর্তের ঘুম টেনে নিয়ে যায় বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পার করে,
চেতনার নিত্যনতুন অধ্যায়ে।
পাশাপাশি শুয়ে থাকা, ছুঁয়ে থাকা মানুষগুলো
ঘুম এলে সেখানে আর থাকেনা।
তারা কে কোথায় যায়, কে জানে?
তারা কেউ আপন সত্ত্বা নিয়ে হারিয়ে যেতে থাকে অদ্ভুত আঁধারে।
ঘুমের ভেতর কতো শব্দ, কতো ইংগিত শুধু ঘা দিয়ে যায়,
সেইসব ঘুমগুলি উদ্বেগে ঠাসা।
এ যেন উপচে পড়া পদ্মদিঘি,
যার তল কেউ কখনো দেখেনি,
বড়ো বড়ো রাঘববোয়াল এসে দিঘির মধ্যিখানে ঘা দিয়ে যায়,
দিঘির ওপর ফেনায়িত বুদবুদ দেখে
লোকে আকাশকুসুম গল্প ফাঁদে।
কিছু ঘুম তাদের নিয়ে যায় সেই অতল জলরাশীর অচেনা জগতে।
অথচ পাশে শুয়ে থাকা মানুষটি,
তার শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ শুনতে পায়,
দেখতে পায় বুকের ছন্দবদ্ধ ওঠানামা।
তবু সে সেখানে নেই,
সে তখন পদ্মদিঘির কোলে, অতল গহ্বরে ডুবে আছে।
হেমন্তের গভীর অন্ধকার রাতে,
যে মানুষটি ঘুমিয়ে আছে নিজের ঘরে,
হয়তো বাতাসের ঝাপটায় জানালার পর্দাটা উড়ছে,
শীত শীত অনুভবে, সে জড়োসড়ো হয়ে আছে।
সে তখন খাঁখাঁ রোদ্দুরে ভীষণ হট্টগোলে দাঁড়িয়ে,
চারিদিকে কতো মুখ, কতো কথা, হৈচৈ চিৎকার,
সে এক কড়া রোদের কর্মব্যস্ত দিন।
সে হয়তো ঘামছে, তীব্র গরমে তার জেরবার দশা।
অথচ সবাই দেখে শীতে জড়োসড়ো,
হেমন্তের শীত শীত রাতে,
কেউ সস্নেহে তার গায়ে চাপিয়ে দেয় পাতলা চাদর।
তবু তারা জানেনা,
সে তখন সূর্যের তেজ্বের সাথে যুদ্ধ করছে অবিরাম।
আমাদের ঘুমগুলো দারুণ সাংকেতিক!
একটা সুস্থ দেহ চোখের সামনে আছে,
অথচ সে সেখানেই নেই।
আত্মাটা চলে যায়, কতদূর, কতপথ–
ঘুমটা ভাঙলে তবে ফিরে আসে সে।
আমাদের এইসব ঘুমের রাত্রিগুলো রঙ্গমঞ্চ,
এ যেন রিহার্সাল অন্তিম যাত্রার প্রাক্কালে।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১৩ জানুয়ারি ২০২২