শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

শেখ ফাহমিদা নাজনীন এর কবিতা ‘আনন্দ-বিষাদের যাত্রা’

বুধবার, জানুয়ারী ২৬, ২০২২
শেখ ফাহমিদা নাজনীন এর কবিতা ‘আনন্দ-বিষাদের যাত্রা’

আনন্দ-বিষাদের যাত্রা
                   - শেখ ফাহমিদা নাজনীন 


দিনের প্রথম ট্রেনের একই কামরায় বসে ছিলাম আমরা, 
আমাদের আসন ছিলো মুখোমুখি, 
যাত্রায় বরাবর অন্তর্মুখী আমি, 
সহযাত্রীর সাথে উৎসুক আলাপে আগ্রহী ছিলাম না কোনোকালেই। 
বরং জানালার বাইরের অন্তহীন খোলা মাঠ,লোকালয়, শাপলার বিল, 
আমাকে মগ্ন করে রাখতো।
তবু্ও তাকে আমি দেখলাম।
সূর্য তখন বুঝি উঠি উঠি,
সকালের একফালি রোদ আড় হয়ে পড়েছে তার মুখের ওপর। 
একটা সদ্য কিশোরী মেয়ের মুখে ভোরের প্রথম রোদ 
কোকিলের গানের মতোই মিষ্টি হয়ে উঠতে পারে, 
ও মুখে স্বার্থের ছায়া তখনও পড়ার কথা নয়।
অথচ কি অদ্ভুত অভিব্যাক্তি খেলা করছিলো তার মুখে! 
আনন্দ-বিষাদের এমন যুগলবন্দী সহসা চোখে পড়ে না। 
মনে হলো শ্রাবণের আকাশ,
এই রোদ, এই মেঘ, এই আবার ঝমঝম বৃষ্টি, 
মনে হলো হাজার বছর ধরে পাওয়া, না পাওয়ার কোনো গল্প 
সে বুঝি ধারণ করে আছে তার অবয়বে। 
এমন মুখ পেলেই চিত্রকর রংতুলি নিয়ে বসে যায়, 
এমন মুখেই বুঝি দুর্বোধ্য কাহিনী সঞ্চিত থাকে, 
এ মুখের তল পাওয়া ভারি দুঃসাধ্য। 
ছিপছিপে গড়নের মেয়েটা, চুলগুলো চুড়ো করে বাঁধা, 
পোশাক-পরিচ্ছদে সচ্ছলতার ছোঁয়া সুস্পষ্ট। 
ফেইসবুকের কল্যাণে মেয়েটাকে আমি চিনতাম।
তার মা-বাবার সাথেও পরিচয় ছিলো অল্পবিস্তর, 
তার জন্মের আনন্দের রেশটুকু আমার কাছেও পৌঁছেছিলো, 
একটু একটু করে বেড়ে ওঠার মুহূর্তগুলো 
বাবা ফ্রেমবন্দী করে ছড়িয়ে দিতেন পরিচিত মহলে। 
আমিও আর সবার মতো সেই হাস্যোজ্জ্বল ছবিগুলো দেখে 
সুখী পরিবারের উৎকৃষ্ট উদাহরণ ভেবে নিয়েছিলাম। 
বাবার উপজীব্য ছিলো সংগীত, মা সাধারণ গৃহিণী, 
তবে সংগীত শিল্পীর বউ বলেই হয়তো 
তার বেশভূষায় প্রগলভতা ছিলো সুস্পষ্ট। 
ঠিক কবে থেকে দ্বন্দের শুরু সে সব খবর জানিনা, 
তবে আচমকা একদিন তাদের বিচ্ছেদের খবর জেনেছিলাম, 
সেও মুঠোফোনের কল্যাণে।
তারপর থেকেই মেয়েটার এই আনন্দ-বিষাদের নৈমিত্তিক যাত্রা। 
সপ্তাহের ছুটির দিনটা সে বাবার শহরে যায়,
বাকি দিনগুলো থাকে মায়ের সাথে। 
সে এখন ভাগাভাগির কন্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, 
মমতার টানাপোড়েন তাকে নাদুসনুদুস খুকি থেকে টেনে এনে 
ছিপছিপে বিষাদ মাখা এক পোড় খাওয়া কিশোরীর অবয়ব এনে দিয়েছে। 
দ্রুতগামী ট্রেনের জানালার ওপাশে 
হেমন্তের ফসল কাটা রুক্ষ মাঠ হাহাকার করে উঠলো, 
সমস্ত প্রকৃতি তখন তীব্র বিষাদে আচ্ছাদিত হয়ে মাতম করছে, 
আহারে! আমার খুকিরে!

শেখ ফাহমিদা নাজনীন 
১৭ জানুয়ারি ২০২২।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল