আমারই চাঁদের হাট
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
শুনেছেন ভাবি, ও পাড়ার ঐ চৌধুরীদের মেয়ে,
যেমন বোঁচা, মুখখানা যেন কালচে দাগে ছেয়ে,
কথা বললেই ঝনঝন করে কাসা-পেতলের বাটি,
হেঁটে চলে এতো ঝুঁকে ঝুঁকে যেন গলে পড়া ঢ্যালা-মাটি।
হেসে মরি ভাই, বলিহারি যাই, পোশাকের এমন ঢঙ,
নাকমুখ ঢাকা ঘোমটাই, যেন আস্ত একটা সঙ।
তার কিনা এতো ভালো বিয়ে হলো! এতো ভালো পাত্র!
শুনেছি ফরেনে কলেজে পড়ায়, নামকরা ছাত্র।
আমি বলি কিনা, ওসব কিছুনা, নিশ্চয় আছে ত্রুটি,
না হলে এমন গেঁয়ো বেছে নেয়? তার সাথে বাঁধে জুটি?
এই যে দেখুন, আমার মেয়েটা, কি দারুণ স্মার্ট!
বৈশাখে সাজে বঙ্গললনা, পশ্চিমা থার্টি ফার্স্ট,
নাচ, গান কিবা সাঁতার কাটা, যে কোনো প্রতিযোগিতা,
সবেতেই তার নাম দেয়া চায়, সবেতেই খোলে মাথা,
বাসে, ট্রেনে, প্লেনে, রিকশা, ট্যাক্সি কিংবা দুপায়ে হেঁটে,
যেখানেই যায় তার সাথে সাথে আমিও রয়েছি সেঁটে।
কি বলবো আর, মেয়েটা আমার বড্ড সরলমনা,
পাছে আসে কোনো উটকো নজর, বিপদের আনাগোনা।
কি বলেন ভাবি, চৌধুরীদের ঐ মেয়েটার সাথে?
এমন মেয়ের তুলনা হয়না, কক্ষনো, কোনমতে।
নিজে মুখে ভাই কি করে শোনাই, নিজের মেয়ের গুণ?
কতো ছেলে তার চোখের ছোবলে তক্ষুনি হয় খুন।
এমন মেয়ের মা হয়েছি বলে করিনে অহংকার,
শুধু বলে যাই, এতো গুণী মেয়ে কার ঘরে আছে আর?
এই যে সেদিন ছেলের বাবাকে স্কুলে ডেকে নিয়ে,
কতো ফিরিস্তি শোনালো টিচার, একগাদা মিছে দিয়ে।
আমার ছেলেটা গোলমাল করে? অসম্ভব সে কথা!
ভালো ছেলে তো, তাকে নিয়ে তাই সকলের মাথা ব্যাথা।
সেদিন বিকেলে ব্যাংকার ভাবি, বললো নাক উঁচিয়ে,
রোজ সকালে ছেলের ব্যাগে টিফিন দেয় গুছিয়ে।
সে দিক, তা বলে আমার ছেলেকে চোর অপবাদ দেয়া?
আমার বাবুতো হিরে-মানিক্য, সোনার পানিতে ধোয়া।
আজকে সকালে বাড়ি বয়ে এসে বললো, কোন এক ছোঁড়া,
বাবু নাকি তার কাপড় ছিঁড়েছে, ভেঙেছে খেলনা ঘোড়া।
একদম এসব মিছে কথা ভাবি, একেবারে বানোয়াট,
সবার চোখের শুল হয়ে গেছে আমার চাঁদের হাট।
ওদের বাবার বেতন যা হোক, উপরিটা বেশ আসে,
তাতেই সবাই কটকট করে, চোখে বিষকাঁটা ভাসে।
প্রত্যেক মাসে নতুন গয়না, নয়া শাড়ি কেনা চাই,
হাজার কয়েক ছেলেমেয়েদের হাত খরচের দায়,
আরও আছে কতো পার্টি-সার্টি, কতো জন্মদিনের গিফট,
খুঁজে নিতে হয়, আয়-ইনকামের নিত্যনতুন লিফট।
জানেন তো ভাবি, আর সকলের মনটাতে দোষ ভরা,
উঠতে বসতে খুঁজে খুঁজে শুধু আমাদেরই খুঁত ধরা।
ঐ যে ওদের ঢ্যাঙাপানা ছেলে, বাইসাইকেলে ঘোরে,
সারা দিনমান রোদে রোদে ঘুরে, জ্বলে জ্বলে পুড়ে মরে।
দেখলেই ওকে গা টা জ্বলে যায়, কখনো বলেছি কি?
তবুও সবার আমাদেরই নিয়ে যত জ্বালা, ঝক্কি।
সে কি ভাবি, একি বললেন আপনি! আমার ছেলেটা পাজি?
যান যান, খুব জানা আছে বেশ, আপনিও কতো হাজী!
মিছেই এতটা সময় নষ্ট, এতো বকবক হলো,
যান তো, আমার কতো কাজ আছে, অযথাই বেলা গেলো।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১৮ জানুয়ারি ২০২২।