ক্যাম্পাস ডেস্ক। করোনাকালীন সামাজিক, আর্থিক ও পারিবারিক চাপ বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে হতাশা বেড়েছে। হতাশা থেকে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেড়েছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ শিক্ষার্থী হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের ৬৫ জন ছেলে ও ৩৬ জন মেয়ে।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়েছে আত্মহত্যা : হতাশায় নিমজ্জিত শিক্ষার্থীরা’ শীর্ষক এই সমীক্ষার তথ্য প্রকাশ করে।
১০১ শিক্ষার্থীর মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ৬২ জন, যা মোট সংখ্যার ৬১.৩৯ শতাংশ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ২৩ জন বা ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
এছাড়াও মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি ১২, যা মোট সংখ্যার ১১.৮৮ শতাংশ। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংখ্যা ৪, যা মোট সংখ্যার ৩.৯৬ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন আঁচল ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী সদস্য ফারজানা আক্তার বিথি।
তিনি জানান, প্রায় অর্ধশতাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার তথ্য এবং আত্মহত্যায় জড়িতদের পরিবারের সাক্ষাৎকার নিয়ে এই সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছে।
এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা এবারই বেশি বলে দাবি করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মহত্যার ঘটনাগুলো নিয়ে অনুসন্ধান তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যার সংখ্যা ৯। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংখ্যাটি ৬, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যাদের সংখ্যা ৩ জন।
আত্মহননকারীদের বয়সভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২২-২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি।
আঁচল ফাউন্ডেশন শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছে।
প্রতিটি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে মেন্টাল হেলথ প্রফেশনাল নিয়োগ দেওয়া এবং ইয়্যুথ অর্গানাইজেশনকে যথাযথ ট্রেনিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে যথাযথ মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা যেতে পারে।
পলিসি ডায়ালগে তরুণদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা পুরোপুরি দেশের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে আত্মহত্যার হার কমিয়ে আনা সম্ভব।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও সেবাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভুক্ত করা।
মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ট্যাবু ও হীনমন্যতা দূরীকরণে প্রাথমিক স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহে জরুরি ভিত্তিতে একটি জাতীয় হটলাইন সেবা চালু করা।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার লক্ষ্যে সরকার একটি বিশেষ অ্যাপ চালু করতে পারে যেন যে কেউ দ্রুত মনোবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারে।
প্রান্তিক পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং তরুণদেরকে মেন্টাল হেলথ ফার্স্ট এইড ট্রেইনিং সরবরাহ করা।
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারি-বেসরকারী উদ্যোগে যুগপৎভাবে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন আয়োজন করা।
সচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ভূমিকা জোরদার করা।
মানসিক চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ ফি ও ঔষধের দাম কমানো।
[তরুণদের দ্বারা পরিচালিত আঁচল ফাউন্ডেশন ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে। এই সংগঠন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আত্মহত্যা ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনাই সংগঠনটির মূল লক্ষ্য।
সময় জার্নাল/আরইউ