সৃষ্টিছাড়া কাণ্ড
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
গেলো বছর শীতের শুরুতেই গাঁয়ে এসেছিলো তারা,
একটা জমকালো গাড়িতে চেপে।
গাঁয়ের আত্মীয়-পরিজন বেশ খুশি হয়েছিলো তাদের পেয়ে,
ভেবেছিলো, দুদিন থাকবে, বেশ কুটুম্বিতে হবে।
তারা নতুন দম্পতি ছিলো যে,
ফর্সা টুকটুকে বউটা মস্ত উঁচু জুতো পরে যখন
এবড়ো থেবড়ো পথে এঁকেবেঁকে হাঁটছিল,
তার নাঁকি সুরের আহ্লাদী মাখা কথায়,
গাঁয়ের ভীষণ কৌতুহলী মানুষগুলো
তাকে ননীর পুতুল ভেবে নিলো।
মিনিটে মিনিটে তাদের যুগল ছবি,
তোমরা যাকে সেলফি বলে থাকো।
কখনোবা বউটার শুয়ে বসে নানান ভঙ্গিমা,
পটাপট উঠে যেতে থাকলো ছোট্ট একটা ফোনের ভেতর।
সে ভারি আশ্চর্য ব্যাপার!
ক্ষেতের একগাদা সর্ষে ফুল দুমড়ে মুচড়ে একাকার হলো
বউটার আছাড়ি বিছাড়িতে।
যদিও তারা বলছিলো, ফটো তোলার পোজ।
গাঁয়ের লোক সে ক্ষতি মেনে নিলো,
কুটুম্ব যে, মানতেই হতো।
সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা একঝাঁক রাজহাঁসকে ফটো তুলতে গিয়ে
ভয় দিয়ে আবারও বনমুখো করলো,
বউ-ঝিদের ভারি হ্যাপা হলো তাদের ফিরিয়ে আনতে।
গাই দু'তে গিয়ে ধবলীকে এমন ভয় পাইয়ে দিলো,
সে ব্যাচারা দুধই দিলোনা সেদিন।
সারা গাঁয়ের সমস্ত প্রাণগুলোকে ব্যাতিব্যাস্ত করে দিয়ে,
সন্ধ্যায় মেঠোপথের ধুলো উড়িয়ে
আবার তারা ফিরে গেলো শহরে।
তাদের ফেলে যাওয়া সেলফি কর্ম নিয়ে
ক'টা দিন বেশ গল্প চললো গাঁয়ের পথে ঘাটে।
গাঁয়ের নিস্তরঙ্গ জীবনে এমন ঘটনা কদাচিত ঘটে থাকে।
বলল সবাই, বটে!
এ জুটি চির অমর হবে,
এমন ধারা ভাব-ভালোবাসা কে দেখেছে আগে?
তারপর –
পরের বছর শীতে,
গাঁয়ের ছেলে আবার নিয়ে এলো বউকে,
হলুদ সর্ষে ক্ষেতে এলিয়ে পড়ে হলুদ সেলফি তুলতে।
ছেলেটাতো এলো কুটুম্বদের কাছে,
কেবল বউটি বদলে গেছে।
আবার চললো সারা দিনব্যাপী সেলফির ঝটপটি,
দীর্ঘশ্বাসে বললো সবাই, বটে!
এ জুটি নিয়ে বলে আর কি হবে,
সৃস্টিছাড়া এমন কাণ্ড কে দেখেছে কবে?
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১৯ জানুয়ারি ২০২২।