কখনো হয়না শূন্য। শেখ ফাহমিদা নাজনীন
কতবার তুমি নিরবে চেয়েছো এইবার শেষ হোক,
জীবনের যত জ্বালা-যন্ত্রণা, হারানো ব্যাথার শোক।
হয়তো তোমার জন্মই ছিলো পিতৃমাতৃহীন,
হয়তো তোমার মাথার ওপর অনাকাঙ্খিত ঋণ।
শৈশব ঠিক শৈশব নয়, নিদারুণ অবহেলা,
ফেলে দেওয়া কারও উদ্বৃত্তেই কাটিয়ে দিয়েছো বেলা।
হয়তো তোমার বাবা বেঁচে আছে, মা গেছে হারানো খাতে,
স্নেহ, মমতার উষ্ণ পরশ পড়েনি তোমার পাতে।
হয়তো তুমি স্বজনের ভীড়ে ভীষণ অনাত্মীয়,
কতবার প্রাণ গুমরে কেঁদেছে হতে কারও প্রাণপ্রিয়।
শিক্ষাপর্ব অভিশাপ যেন, ঘা খেয়েছো বারেবারে,
স্বপ্ন? সে তো সোনার হরিণ, পালিয়েছে সরে সরে।
চেয়েছিলে তুমি একাকী জীবনে সঙ্গী করতে যাকে,
সেও চলে গেছে নতুন স্বপ্নে, অন্য পথের বাঁকে।
যতবার তুমি দাঁড়াতে চেয়েছো, ততবার গেছো পড়ে,
জীবন তোমার উথাল-পাতাল কুজ্ঝটিকার ঝড়ে।
অবশেষে যে কাজখানা পেলে মনমতো নয় মোটে,
অনিশ্চয়তা তারও পিছু পিছু অভিশাপ হয়ে ছোটে।
জীবনে যে এলো আপনার জন ভালোবেসে তাকে নিলে,
সে হবে তোমার সহমর্মি, স্বপ্নটা দেখেছিলে।
হয়তো সেখানে ভুল ছবি ছিলো, মানুষটা ছিলো ভুল,
বাকি জীবনটা দিয়ে গেলে শুধু সেই ভুলেরই মাশুল।
সন্তান এলো, তোমারই রক্ত, ভাবলে এবার শেষ,
এই জীবনের যত লাঞ্ছনা, না পাওয়ার যত লেশ।
আসলে সে সব মিছে সান্ত্বনা, স্বার্থের চক্র,
তোমার জীবন তেমনই একাকী, দুঃসহ, বক্র।
দিনশেষে দেখো চারপাশে শুধু মুখোশ পরানো মুখ,
মুখোশের আড়ালে উধাও তোমার সারাজীবনের সুখ।
যতদিন ছিলো অর্থ-বিত্ত, যতদিন ছিলো মেধা,
ততদিন ছিলো দুধের মাছিরা চারপাশ জুড়ে বাঁধা।
যখন তোমার অশক্ত দেহ, বেলা গড়িয়েছে বেশ,
আবার ডুবেছো একাকী জীবনে, নিঃসঙ্গ আবেশ।
আপনজনেরা গ্রাহ্য করেনা, কেউ আর রাখেনা খোঁজ,
ক্রমে হও তুমি উদ্বৃত্ত, সংসার দেহে বোঝ।
হতাশা তোমাকে চারপাশ থেকে গ্রাস করে নিতে আসে,
মনের শক্তি, প্রভুর ভক্তি, মুছে দিতে চায় ত্রাসে।
একাকী প্রহরে ভাবো অবসরে, হিসাবের খাতা খুলে,
যা চেয়েছি কভু, দেননিতো প্রভু অভাগার হাতে তুলে।
কতো দোয়া, কতো গভীর রাত্রে সিজদায় মাথা রেখে,
চেয়ে গেছি প্রভু, একবার তবু সুখটুকু দেন লিখে।
অথচ কপালে সুখ সইলোনা, মিছে হয়ে গেলো দোয়া,
রবের দোরে কি আমার আর্তি কখনো দেয়নি ছোঁয়া?
রব হেসে বলে, ওরে বোকা ছেলে, অভিযোগ সব মিছে,
কতদিন, কতো বিপদের ঘটা, তোর দোয়াতেই গেছে।
যত চাওয়া সব জমিয়ে রেখেছি, আখিরাতে তুই পাবি,
আমৃত্যু শুধু দৃঢ় বিশ্বাসে, ভালোবেসে চেয়ে যাবি।
রবের দুয়ারে আর্তের চাওয়া কখনো হয়না শূন্য,
আজ হোক, কি'বা আগামী জীবনে নিশ্চয় হবে পূর্ণ।
সময় জার্নাল/আরইউ