নিজস্ব প্রতিবেদক্ক: গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের অনুরণন পেয়েছি বাংলাদেশের স্বাধীনতার অসহযোগ আন্দোলনে। আমাদের সামাজিক আন্দোলনে আত্মপীড়নের মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার যে প্রক্রিয়া- তাতেও অনুপ্রাণিত হয়েছি। তাছাড়া গান্ধী জীবনাচরনের মধ্যে তার আদর্শকে ধারণ করেছেন এবং একজন অনুকরনযোগ্য প্রেরনার উৎসে পরিণত হয়েছেন।
কথাগুলো বলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিডি-র সন্মানিত ফেলো ডঃ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য । আজ মহাত্মা গান্ধীর ৭৪-তম প্রয়ান দিবস উপলক্ষে “মহাত্মা গান্ধী স্মারক সদন” আয়োজিত “মহাত্মা গান্ধীর দৃষ্টিতে উন্নয়ন ও পরিবেশ” শীর্ষক একটি অনলাইন আলোচনা সভার প্রধান আলোচক হিসেবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ডঃ আতিউর রহমান এবং প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিডি-র সন্মানিত ফেলো ডঃ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। আলোচনায় ছিলেন কলকাতার গান্ধী সংগ্রহালায়ের পরিচালক ডঃ প্রতীক ঘোষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক শুভ কিবরিয়া প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন গ্রীন ভয়েস-এর প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে সৈয়দ নাসিফ মকসুদ বলেন, গান্ধী শুধু একটি জাতি বা একটি জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের কথা চিন্তা করেননি, তিনি চিন্তা করেছেন সকলের উন্নয়নের কথা। যে উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় সকলে সম্পৃক্ত হবে, সেখানে পরিবেশ ধ্বংস করে কোনো পরিকল্পনা নেয়া হবে না। গান্ধী ছিলেন পথিকৃৎ পরিবেশবাদী যিনি উন্নয়নের সাথে পরিবেশের প্রশ্নটিকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
কলকাতার ডঃ প্রতীক ঘোষ বলেন, গান্ধী চিন্তা করেছেন স্বাবলম্বী জনগোষ্ঠী প্রকৃতিকে ধ্বংস না করে প্রকৃতি থেকে সমৃদ্ধ হবে আবার প্রকৃতিকে রক্ষা করবে। গান্ধীজী উচুমানের জীবন ধারনের বিরোধী ছিলেন তা বললে ভুল হবে। তিনি মনে করতেন উচুমানের জীবন সকলের জন্য নিশ্চিত করতে হবে এটাই ছিলো তার প্রত্যাশা।
তিনি আরো বলেন, গান্ধী মনে করতেন দারিদ্রকে উপলব্ধি করতে হলে সেই জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে দুর্বল, দুস্থ যে তার জায়গা থেকে তা করতে হবে। এযুগের উন্নয়নের যে ধারণা তার সঙ্গে এই কথার সাদৃশ্য আছে। উন্নয়নের মাপকাঠি তিনি জিডিপির মধ্যে দেখেন নি।
সভাপতির বক্তব্যে ডঃ আতিউর রহমান বলেন, গান্ধী ছিলেন একজন বহুমাত্রিক মানুষ। তিনি বিশ্বাস করতেন বৈষম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত কোনো সমাজ শেষ পর্যন্ত টেকসই হতে পারে না। মানুষের প্রতি বঞ্চনা মুক্ত একটি সমাজ তিনি চেয়েছেন তার গ্রামভিত্তিক সমাজে। তার উন্নয়ন ছিল একটি সামগ্রিক উন্নয়ন। শুধু মানুষের আর্থিক উন্নয়ন নয়, ইকোলজিকাল ভারসাম্য রক্ষা করে, প্রাকৃতিক সম্পদের সংযমের সাথে ব্যবহার এসবই তিনি চিন্তা করেছেন প্রায় একশ বছর আগে। শুধু তাই নয় আজকে টেকসই উন্নয়নের যে ধারণা তা গান্ধীর চিন্তা থেকে অনেকটাই উৎসারিত।
উল্লেখ্য “মহাত্মা গান্ধী স্মারক সদনের” প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত লেখক চিন্তাবিদ সৈয়দ আবুল মকসুদ। যিনি নিজেও গান্ধীর আদর্শে অন্যায়ের বিরুদ্ধে একাইভাবে দাঁড়াতেন।
এমআই