পিঠার নিমন্ত্রণ
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
শীতের ভোরে চোখ মেলতেই পিঠার সুবাস আসে,
গাঁয়ের পথে, পাড়ায় পাড়ায় সেই সমাচার ভাসে।
নলেন গুড়ের মাতাল ঘ্রাণে কুটুম পাখি ডাকে,
গেরস্থ বউ প্রাণ আনচান রস জ্বালানোর ফাঁকে।
বারে বারে দেখছে বেলা কাজের পাহাড় জমে,
রাঙা আলু পুড়ছে চুলোয়, ভাত বসানো দমে।
এমন দিনে শিশির কণায় মাখামাখি হয়ে,
কুটুম আসার খবর যেন বাতাস আনে বয়ে।
গেছোগুলোর কান খাড়া রয় পৌষ-মাঘের বেলা,
আসতে পারে এমন দিনে ফুপু, খালু, খালা।
হঠাৎ যদি দেখবে চোখে চৌরাস্তার মোড়ে,
আসছে হেঁটে নতুন জামাই, যাবেই সাড়া পড়ে।
বউ-ঝিয়েরা বসবে দাওয়াই চালের গুঁড়ো নিয়ে,
ক্ষীরশাপাতি, চিতই পিঠা, মুড়ি মাখা ঘিয়ে।
নতুন জামাই সঙ্গে আরও কুটুম্ব ছয়জন,
চন্দ্রপুলি দিতেই হবে রাখতে গেলে মন।
পাটিসাপটায় পুর ভরবে পাটির পরে বসে,
কাজের চাপে, চুলোর ভাপে বাঁধবে আঁচল কষে।
পাকান পিঠা পাক করতে ভুল হবেনা মোটে,
বড়শী নিয়ে কর্তা তখন ছুটবে নদীর ঘাটে।
সাত সকালে ভাপা পিঠার কোমল নিমন্ত্রণে,
ছটফটিয়ে ঘুম পালাবে কুটুম্বদের মনে।
দুধপুলিটার দুধ আসবে বাড়ির গোহাল থেকে,
সেমাইপিঠা রঙ ছড়াবে ঘণ দুধে মেখে।
ফুলঝুরিটা সাজিয়ে দিলে কাসার থালার পরে,
কুটুম্বরা অবাক হবে গোলাপ মনে করে।
ছিট রুটি আর ভাপাপুলি, গোকুল পিঠার রসে,
সকাল বেলার নাশতা হবে দারুণ পরিতোষে।
এতকিছু পেয়েও যদি মনখানা না ভরে,
তবে বলি, ওগো জামাই, যাওনা এবার ফিরে।
শহরবাড়ির কেক, চকলেট, পাউরুটি, বিস্কুট,
ওসব খেয়ে মুখটা তোমার হয়েছে তিতকূট।
তিতা মুখে মিঠা পিঠার বুঝবে তুমি কি?
খাওগে তুমি কচুপোড়া, পান্তা ভাতে ঘি।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৩১ জানুয়ারি ২০২২।