আমার স্বাধীনতা
        আমি যুদ্ধ দেখিনি
        তবু যুদ্ধের দামামা আমাকে ছুঁয়ে যেত-
        আমি যুদ্ধ দেখিনি
        তবু আমার মায়ের অস্থিরতা ক্রমশ:
        আমাকে অশান্ত করে দিত-
        আমি যুদ্ধ দেখিনি
        তবু রেললাইন ধরে খালিপায়ে
        মিলিটারী আসবে বলে উর্ধশ্বাসে 
        ছুটে গিয়েছিলাম বহু বহুদূর-
        আমি যুদ্ধ দেখিনি
        তবু ধানক্ষেতের আল বরাবর 
        উদভ্রান্তের মত হেঁটে গিয়ে
        আঁখবনে শ্বাস নিয়েছিলাম-
        আমি যুদ্ধ দেখিনি
        তবু সেই নদীতটে পা ডুবিয়ে 
        জ্যোৎস্না খেতে খেতে 
        লাশের মিছিল দেখেছিলাম-
        আমি যুদ্ধ দেখিনি
        তবু বাবার স্বাধীন বাংলা বেতারের রণসঙ্গীতে 
        আমার ছোট্ট শরীরের সমস্ত ধমনী শিরা ঊপশিরা
        স্বাধীনতার ডাকে বেপরোয়া হয়ে যেতো-
        আমি যুদ্ধ দেখিনি
        তবু ক্ষনে ক্ষনে ভরা বরষায় 
        ডুব সাঁতারের সন্ধিক্ষণে স্বাধীনতাহীনতায়
        আমার অস্ফুট হৃদপিন্ড কুকরে মুকরে যেতো-
        আমি কোনো যুদ্ধ দেখিনি
        তবু গরু গাড়ি চড়ে গাঁয়ের পথে যেতে যেতে
        পঁচা গলা লাশের পাহাড় পেরিয়ে হঠাৎই
        সরিষা ফুলের ঘ্রাণে মন মাতাল হয়ে যেতো-
        আমি যুদ্ধ দেখিনি
        তবু ন'মাসের বিধ্বস্ত দেশের রক্তাত্ত আঙিনায়
        বিজয়কেতন উড়িয়ে দামাল ছেলেদের সাথে
        ঘুঙুর পরে নেচেছিলাম-
        আমি যুদ্ধ দেখিনি
        তবু কি নির্দ্বিধায় পিতার উদ্ধত তর্জনীর তান্ডবে
        একটা তাজা মানচিত্র পেয়েছিলাম-
 
        আমি যুদ্ধ দেখিনি
        তবে স্বপ্ন দেখেছিলাম স্বাধীনতার-
        আমি যুদ্ধের অবসান চেয়েছিলাম-
        আমি বিজয়ী হয়েছিলাম- 
        অতপর
        এক আলোকিত বসন্ত ভোরে 
        স্বাধীন বাংলায়
        পৃথিবীর আলো দেখেছিলাম-
        আমি স্বাধীন প্রজন্ম হয়ে জন্মেছিলাম-
        কিন্তু হায় সেলুকাস!
        স্বাধীন হয়েও বড় পরাধীন আমি আজ
        অন্দর বাহিরে আজও আমি
        যুদ্ধের রক্তগঙ্গা বইতে দেখি অহর্নিশ-
        আজও অপেক্ষায় কাটে প্রহর-
        এক সোনালী দিনের প্রতিক্ষায়!
সাহনিমা তাসনিম
২৬ মার্চ. ২০২১