বুধবার, ফেব্রুয়ারী ২, ২০২২
ড. শোয়েব সাঈদ: জানুয়ারির মাঝামাঝিতে একটি কলামে বলেছিলাম জানুয়ারির শেষ নাগাদ ওমিক্রন পিকে উঠবে বাংলাদেশ। আশংকা ছিল ওমিক্রন সংক্রমণ পশ্চিমাদের মত ডেল্টার চেয়ে বহুগুনে বাংলাদেশে আছড়ে পড়ে কিনা। সেই সাথে আশাও ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা ভারতের মত ওমিক্রন ঢেউ ডেল্টা ঢেউয়ের কাছাকাছি পৌঁছে থেমে যাবে হয়তো।
এই মুহূর্তে ওয়ার্ল্ডমিটারের গ্রাফ বলছে বাংলাদেশে ওমিক্রন সংক্রমণ ডেল্টার কাছাকাছি পৌঁছে ঊর্ধ্বগতি থেমে গিয়ে নীচে নেমে আসছে। একই চিত্র ভারতেও। ভারতে ওমিক্রন সংক্রমণ ডেল্টার ঢেউকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি, এখন দ্রুত নিম্নমুখী। ওমিক্রন সংক্রমণে ভারত আমাদের চেয়ে কয়েকদিন এগিয়ে ছিল, এখন নিম্নমুখী প্রবণতাতেও এগিয়ে। ওমিক্রন সংক্রমণে ভারতীয় চিত্রটি বাংলাদেশের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ সংক্রমণের টেকসই রাহুমুক্তির জন্যে।
টেস্ট করা সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে হয়তো। তথ্য-উপাত্তে নানা সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েও বলা যায় তুলনামূলক চিত্রে ওমিক্রন এই উপমহাদেশে সংযত থেকেছে, পশ্চিমা দেশগুলো কিংবা জাপানের মত আগ্রাসী রূপ দেখাতে পারেনি।
বাংলাদেশে ওমিক্রনে সবচেয়ে বেশী সংক্রমণ দেখা গিয়েছে জানুয়ারির ২৫ তারিখ, ১৬ হাজারের বেশী সংক্রমণ নিয়ে। বেশ কয়েকদিন যাবৎ কমছে, ১০ থেকে ১৩ হাজারে উঠানামা করে এখন ১২ হাজারের কাছাকাছি চলে এসেছে। পরিস্থিতি মূল্যায়নে সংখ্যার চেয়ে সংক্রমণের হার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। সংক্রমণের হার ৩৩% এর উপরে উঠে গিয়ে এখন নিম্নমুখী, ২৭%।
ওমিক্রনের বৈশ্বিক ধারা অনুসারে ওমিক্রন বাংলাদেশেও কিছুটা উত্থান-পতনের মাঝে সার্বিকভাবে কমতে থাকবে এখন। আগামী দু সপ্তাহে পরিস্থিতি বেশ ভাল হবে বলে আশা করা যায়। কানাডা সহ অনেক দেশ ওমিক্রন সংকটে টানেলের শেষ প্রান্তে আলোর খোঁজে অবশেষে টানেল থেকে বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে টানেলের শেষ প্রান্তে আলো দেখা যাচ্ছে, সময়ে বাংলাদেশও টানেল থেকে বের হয়ে আসবে।
উন্নত বিশ্বের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ আর নীতি নির্ধারকরা এখন জোর দিচ্ছেন ওমিক্রন তথা কোভিডের সাথে মানিয়ে চলার উপর। কোভিড প্যানডেমিক থেকে এনডেমিকের রূপ নিলেও একেবারে নির্মূল হতে সময় লাগবে। আর তাই লকডাউনের পক্ষে থাকা বৈশ্বিক নীতি নির্ধারকরাও এখন লকডাউনের বিপক্ষে এবং ওমিক্রন মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখার পক্ষে।
ওমিক্রন সংগ্রামে পশ্চিমাদের ডাবল টিকাদান আর বুস্টার ডোজ বেশ কাজে দিয়েছে। বাংলাদেশের অব্যাহত টিকাদানে সবারই উচিত টিকা নিয়ে, বুস্টার ডোজ নিয়ে নিজেকে আর চারপাশকে সম্ভাব্য সুরক্ষা দেওয়া। সেই সাথে থাকছে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গত দু বছর যাবৎ অনুভূত আমাদের ইমিউনিটির অদৃশ্য সক্ষমতার আশীর্বাদ।
মাস্ক হচ্ছে কোভিডের প্রাথমিক আর প্রধানতম সুরক্ষা। মাস্ক, স্যানিটাইজার, ভিড় এড়িয়ে চলা সহ সরকারি নির্দেশনা মেনে চললে আমরা ওমিক্রন সংকট অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পারবো।
লেখক: ড. শোয়েব সাঈদ, অণুজীব বিজ্ঞানী এবং কলামিস্ট।