বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বেপরোয়া গাড়ি চলাচল, জীবন নিয়ে সংশয় শিক্ষার্থীদের

বুধবার, ফেব্রুয়ারী ২, ২০২২
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বেপরোয়া গাড়ি চলাচল, জীবন নিয়ে সংশয় শিক্ষার্থীদের

মো: তাজুল হোসেন, খুবি প্রতিনিধি: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে জিরোপয়েন্ট-গল্লামারী সড়কে চার লেনের রাস্তা সংস্কারের কাজ  ৬০% শেষ হলেও নেই কোন স্পিড ব্রেকার, ফুটওভার ব্রিজ। অথচ দূরপাল্লার ভারী যানবাহন বাস, ট্রাক, পিকআপ, প্রাইভেট কার, মাইক্রো বাস ছাড়াও বিভিন্ন রকম যানবাহন বেপরোয়া গতিতে চলছে। তাই যেকোন মূহুর্তে বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাধারণ পথচারীরা।

এখানে ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণের কথা থাকলেও এখনোও এটার টেন্ডারই হয়নি। কাজ শেষ না হলে জেব্রা ক্রংসি, রোড ক্রসিং সিগন্যাল, সর্তকবার্তা দেওয়া যাচ্ছে না। এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৬০% শেষ হয়েছে এবং বাকি কাজ শেষ হবে জুনের মধ্যে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের আগামী ০৫ মাসের মত এমন ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনের রাস্তা, গল্লামারী বাজার রোডের সামনের চিত্র একই। রাস্তা পার হতে হিমশিম খাচ্ছে শিক্ষার্থী ও অনান্যরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের বিপরীতে ছাত্রদের তুলানায় ছাত্রীরা মেস বাসাগুলোয় ভাড়া করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস করা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ সম্পাদন করতে রাস্তা পার হতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। অথচ রাস্তায় কোন ধরণের সর্তক বার্তাও নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে সওজের মিটিং হয়েছিল গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর। জিরোপয়েন্ট থেকে গল্লামারী চারলেন প্রকল্পে নিরাপদে যানবাহন ও জনচলাচলের জন্য সড়ক ডিভাইডার, সার্ভিস লেন, ফুটপাথ কাম ড্রেন, দৃষ্টিনন্দন ফুটওভারব্রিজসহ বেশকিছু বিষয় অন্তর্ভুক্তি ও বাস্তবায়নের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। কিন্তু  রাস্তা সংস্কারের কাজ শেষ না হওয়ায় এখনো কোন ধরনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।

সওজ সূত্রে জানা যায়, ময়লাপোতা মোড় থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল। প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।

বাংলা ডিসিপ্লিনের ফারহানা নাজ বন্নি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী বিশেষ করে মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের বিপরীতে আবাসিক এলাকাগুলোতে থাকে। রাস্তা দিয়ে দূরপাল্লার গাড়ি এবং ভারী পণ্যবাহী ট্রাক বেপরোয়া গতিতে চলে। রাস্তা পারাপারের সময় প্রতিনিয়ত তাদেরকে ঝুঁকি নিতে হয়। প্রশাসনের উচিত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করা কারণ সবার আগে জীবন।

এদিকে জয় বাংলা রোড থেকে সোনাডাঙার ময়ুরী ব্রীজের বাইপাস রোডের সংস্কারে কাজ চলায় গাড়ি গুলো ইসলামনগর হল রোড দিয়ে প্রতিনিয়িত যাতায়াত করছে এবং উঠছে জিরো পয়েন্ট-ময়লাপোতা সংস্কার কাজ চলা রাস্তায়। এর ফলে চাপ বাড়ছে ইসলামনগর হল রোড এবং ময়লাপোতা-জিরো পয়েন্ট রোডে। হল রোড ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ জায়গা। খাওয়া দাওয়া, আড্ডা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ গুলো এখানে শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত করে থাকেন। গাড়ি এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জয় বাংলা রোড থেকে সোনাডাঙার ময়ুরী ব্রীজের বাইপাস রোডের সংস্কারে কাজ চলছে। এজন্য গাড়ি গুলো বিকল্প পথ হিসাবে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। একইসাথে দুই মেইন রোড আর বাইপাস রোডের রাস্তার সংস্কার করায় হল রোড দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে।

উপজেলা প্রকৌশলী ডুমুরিয়া, মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে, যার ফলে ওই রোড দিয়ে গাড়িগুলো চলাচল করছে। আগামী চার পাঁচ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। তখন ওদিকে গাড়িগুলো আর যাবে না।

ইংরেজি ডিসিপ্লিনের মোস্তাক আহমেদ বলেন, গল্লামারী টু জিরো পয়েন্ট রোড এবং হল রোড (ইসলাম নগর রোড) শিক্ষার্থীদের জন্য ক্রমাগত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতেছে। এই রাস্তা দুটিতে অতি শীঘ্রই গাড়ি চলাচলের সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। দূর্ঘটনা এড়াতে আরও যেসব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার সেগুলো নির্ধারণ করে দ্রুত  বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেইনগেটের তুলনায় গল্লামারী রোড (হল রোডের শেষ প্রান্ত) দিয়ে বেশি যাতায়াত করে। কোনো দূর্ঘটনা ঘটার আগেই এই রোডের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সার্বিক বিষয়ে ফুটওভার ব্রিজ নির্মানের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মতামত জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সওজে কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি এবং টেলিফোনে যোগাযোগ করেছি যতদ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন  এলাকায় স্পিডব্রেকার ও ফুটওভার ব্রিজে নির্মানের বিষয়ে।তারা আমাদের জানিয়েছে আমাদের কাজ এখন চলমান। কাজ শেষে অতিদ্রুত এটার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবো।

এছাড়াও ক্যাম্পাসের ভেতরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রক্লপের কাজ চলছে, ইট, পাথর বহনকারী মিনি ট্রাকগুলো কোনধরনের গতিবিধি না মেনে চলাচল করতে দেখা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে নির্মাণ কোম্পানিদের সাথে কথা বলবো। গাড়ি গুলোর গতিবিধি বিষয়ে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (খুলনা) মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, ফুটওভার ব্রিজের ডিজাইন শেষ।  বরাদ্দ হয়ে গেছে।  এরপর টেন্ডারের অপেক্ষায়  আছে। টেন্ডার হয়ে গেলে কাজ শুরু হবে। এছাড়াও স্পিড ব্রেকারের বিষয়টি বিবেচনায় আছে কর্তৃপক্ষের বলে জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী আবিদ আহসান শান্ত বলেন, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল- "বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন সড়ক অর্থাৎ গল্লামারী-জিরোপয়েন্ট সড়কে কোন ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।"যেহেতু বিকল্প রাস্তা আছে (সোনাডাঙ্গা বাসটার্মিনাল-বাইপাস-জিরোপয়েন্ট), সেহেতু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই দাবি তোলা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এর বাস্তবায়ন হয়নি। 

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল