চাঁদপুর প্রতিনিধি। একটি প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ফুটফুটে এক পুত্র সন্তান জন্ম দেন তামান্না বেগম। তিনি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়নের হানিরপাড় গ্রামের দিনমজুর মো. আলমের স্ত্রী।
বিল পরিশোধ করতে না পারায় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের লোকদের পরামর্শে নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করে ওই হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেন তিনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনমনীয় হওয়ায় বাধ্য হয়ে সন্তান বিক্রি করে বাড়ি ফিরে গেলেও নবজাতকের জন্য এখন প্রতিনিয়ত বিলাপ করছেন দরিদ্র তামান্না।
জানা গেছে, প্রসবব্যথা উঠলে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে গত ২৬ জানুয়ারি ছেংগারচর পালস্ এইড হাসপাতালে ভর্তি হন তামান্না বেগম। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনে পুত্রসন্তান জন্ম দেন তিনি। এরপর ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকেন তিনি।
রিলিজের সময় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের বিল আসে ২৬ হাজার টাকা। ওই টাকা পরিশোধ করার সামর্থ্য ছিল না তামান্না বেগমের দিনমজুর স্বামীর। এ অবস্থায় ছেংগারচর বাজারের কাউসার নামে এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে কোনো এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে নবজাতককে বিক্রি করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেন তিনি।
তামান্না বেগম জানান, সন্তান জন্মের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিল পরিশোধে নিরুপায় হয়ে পড়ে তিনি। মানসিকভাবে এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।
তিনি আরও জানান, বাচ্চা সিজারের পরপরই হাসপাতালের ম্যাডাম (নাম জানেন না বলে জানান) বাচ্চা বিক্রির জন্য তাকে পরামর্শ দেন। তারাই লোক ঠিক করে ৫০ হাজার টাকায় বাচ্চা বিক্রি করে দেন। ওই ৫০ হাজার টাকা থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের বিল ২৬ হাজার টাকা রেখে বাকিটা তার হাতে গুছিয়ে দেন।
সরেজমিনে দেখা যায় সন্তানের জন্য অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পড়ে কাঁদছেন ওই মা। বলেন, কাউসার নামে যে ব্যক্তির নামে বাচ্চা বিক্রি হয়েছে, তাকেও আমি চিনি না। এখন তিনি বাচ্চা ফিরে পেতে চান বলে জানান।
পালস এইড হাসপাতালের ব্যবস্থাপক লিমন সিকদার বলেন, সিজারিয়ান অপারেশন আমাদের এই হাসপাতালে হয়েছে। কিন্তু বাচ্চা বিক্রির বিষয়টি আমাদের জানা নেই।
মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শাহজাহান কামাল বলেন, বিষয়টি আপনাদের কাছ থেকেই শুনলাম। অভিযোগ পেলে বাচ্চা উদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চাঁদপুর পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সময় জার্নাল/আরইউ