ক্ষমা
আমাদের দিনগুলি ভারি ক্ষমাহীন, রাতগুলিও,
কতবার হাতজোড় করেছিলো মেয়েটি, চুরি করিনি গিন্নীমা।
গিন্নীমা গ্রীবা বাঁকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন,
গিন্নীমা সেদিন ছিলেন ক্ষমাহীন।
তা হবেন নাইবা কেন?
গেল বছর কাশ্মীর থেকে এনেছিলো মেজ বোনের সেজ ছেলে,
বড় সাধের পশমিনা শালটি।
তা কিনা পলকেই বেমালুম গায়েব?
গিন্নীমা নিশ্চিত এ ঐ ঠিকে মেয়েটিরই কাজ।
ছোট জাতের মুখে আগুন,
ওদের ভারি লোভ।
ঐ অতো দামী শালটা!
একসাথে চারমাসের বেতন কেটে নিয়ে তবেই গিন্নীমার শান্তি।
আমাদের গিন্নীমার অনেক আছে,
তা থাক, তবু তিনি ক্ষমাহীন।
মেয়েটির বাবা ছিলো দর্জি,
ছ'টাকা, ন'টাকার কাপড় সেলাইয়ের কম মাইনের দর্জি।
তাদের একখানা ছোট্ট ঘরে গাদাগাদি বাস করে আধাডজন ভাইবোন।
নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে,
কুটো ভেঙে দুখানা করার বয়স হবার আগেই
তাদের কাজে বেরোতে হয়।
গিন্নীমার রাজভান্ডারে যদি কখনো হিসাবের গড়মিল হয়,
তবে তার দায় গিয়ে পড়ে ঝি-চাকরের ওপর।
অভাবীদের এসব অপবাদ সয়ে নিতে হয়,
আমাদের গিন্নীমা ন্যায়ের মূর্তরূপ, বেহিসাবি দুনিয়াতে ক্ষমাহীন।
তারপর একদিন,
মাস দুয়েক পরে,
গিন্নীমার বান্ধবীর অঙ্গে শালখানা ঝলমল করে উঠলো,
চুপিসারে ঢোক গিললেন গিন্নীমা।
ততক্ষণে ঠিকে কাজের মেয়েটির নির্দোষিতা বুঝে গেছেন তিনি।
তবু কি আর করা, ক্ষমাহীন গিন্নীমা,
ক্ষমা চাইতেও শেখেননি যে।
আমাদের কর্তাটিও বলিহারি,
ঠোকর খেয়েছে গাড়িটা,
ড্রাইভারের বেতন কাটা যায়,
শুকিয়ে গেছে গাছটা,
মালিকে থাপ্পড় দেয়া চায়।
কোনো কিছু মনমতো হয়ে ওঠেনা,
তাই সবখানেই ক্ষমাহীনতার রাজত্ব।
অথচ পনেরোশো বছর আগে,
রাসুলের সহচর তিনি,
সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস।
জান্নাতের বার্তা এসেছিলো তাঁর কাছে।
তামাম সাহাবীর সম্মানিত কৌতুহলে আবিস্কৃত হলো এক মহাসত্য, ক্ষমা!
রোজ রাতে ঘুমুতে যাবার আগে তিনি ক্ষমা করতেন সমস্ত সৃস্টিকে,
যারা তাঁকে দুঃখ দিয়েছে জ্ঞানত বা অজ্ঞানত।
ক্ষমা করতে ভালোবাসতেন, ক্ষমা চাইতে ভালোবাসতেন।
ক্ষমা! কি অপূর্ব অনুভূতি!
তিনি হয়ে উঠলেন জান্নাতি।