মো. মাইদুল ইসলাম: সাত কলেজে ভর্তির বিষয় ও কলেজ পছন্দের রেজাল্ট দিয়েছে। কলেজ ও বিষয় পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে সাত কলেজের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিচ্ছে সদ্য চান্স পাওয়ারা। একটা পোস্ট দেখে চোখ আঁটকে যায়, হেলাল নামের একজনও জানিয়েছেন বিষয় ও কলেজ পয়াওয়ার কথা । তবে তার চান্স পাওয়ার অনুভূতি অন্য সবার চেয়ে আলাদা ও আনন্দের। কারণ হেলাল অন্য সবার মত নয়, তিনি দশ আঙ্গুল দিয়ে লিখতে পারেনা। তবে এই প্রতিবন্ধকতা দমিয়ে রাখতে পারেনি হেলালকে। সবা বাঁধা ডিঙিয়ে স্নাতকে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করে নিয়েছে।
বলছিলাম যশোরের কন্দর্পপুর গ্রামে কৃষক পরিবারে জন্মানো দুই হাতে দশ আঙুল ছাড়া হেলালের কথা। তার দুই হাত আঁকারেও ছোট স্বাভাবিকের চেয়ে। দৃঢ় প্রত্যয়ী হেলাল এবার চান্স পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি বাঙলা কলেজের সমাজকর্ম বিভাগে।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মানো হেলালকে এ পর্যন্ত আসতে নানা চড়াই-উৎরাই পার করতে হয়েছে। সাইকেল চালাতে না পারায় হেঁটে দূরের স্কুলে যাওয়া, পরীক্ষায় লিখতে না পারাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কথা জানালেন তিনি। তবে অদম্য হেলাল সব কিছুর পরে বাঙলা কলেজে চান্স পেয়ে উচ্ছ্বাসিত। বলেন, খুব ভালো লাগছে আমার মত একটা ছেলে সরকারি বাংলা কলেজে চান্স পেয়েছি এটাতে।
তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে সে তৃতীয়। অন্য শিশুরা যখন ছোটাছুটি করতো, হেলাল তখনো হাঁটতে শিখেনি। পরিবারের সবার চেষ্টায় পাঁচ বছর বয়সে হেলাল হাঁটতে শিখে। আশেপাশের মানুষজন হেলালের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে প্রথমে অন্যরকমভাবে নিতো, বিভিন্ন কথা বলতো কিন্তু যখন হাঁটতে শিখে, পড়াশোনা শুরু করে তখন তারা আর তেমন কিছু ভাবে না। তার পরিবার সবসময় অন্যদের বোঝাতে চেষ্টা করতো সে ও অন্য ছেলেদের মতো এগিয়ে যেতে পারবে। তারা সবসময় সহযোগিতা করতো, সাহস যোগাতো। নিজের মনোবল আর পরিবারের সাপোর্টের ফলেই তার এ পর্যন্ত আসা বলে মনে করেন হেলাল।
সাত বছর বয়সে পড়ালেখা শুরু করেন। সরকারী বীর শ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মাদ কলেজ থেকে ২০২১ সালে এইচএসসি পাশ করেন হেলাল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের সহযোগিতা ও ভালোবাসা পেয়েছেন সবসময়।
স্বাভাবিক অন্যদের মত পড়ালেখার সুযোগ হয়নি হেলালের। তাকে নানা বাঁধার মুখোমুখি হতে হয়েছে পড়াশোনা করতে যেয়ে। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে আমি পড়াশোনা করেছি। আমার বাড়ি থেকে স্কুল ছিলো বেশ দূরে। অন্যরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেত আর আমি তাদের দেখতাম আর আফসোস করতাম। হাতের সমস্যার কারণে সাইকেল চালাতে পারতাম না তাই কয়েক কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যেতে হয়েছে আমাকে।
পরীক্ষায় অন্যরা তিন ঘন্টায় লিখে শেষ করতে পারলেও তাঁর তিন ঘন্টা লিখে শেষ করা সম্ভব হতো না। হেলাল চেষ্টা করতো ওই সময়ের ভেতরে কষ্ট করে হলেও লেখা শেষ করার।
উচ্চ মাধ্যমিকের পর এবার স্নাতকের পাশ করে আরো এগিয়ে যেতে চান হেলাল। বলেন, ‘মায়ের জমানো টাকা দিয়ে কোচিং করেছি। অনেক কষ্টে মা টাকাগুলো সঞ্চয় করেন। এখন আমি বাঙলা কলেজে চান্স পেয়েছি, ভালো কিছু করতে চাই।’ তবে কৃষক বাবার পক্ষে ঢাকায় পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হবে। তাই সরকার বা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে পড়াশোনার জন্য সাহায্য কামনা করেন তিনি।
দৃঢ় প্রত্যয়ী অদম্য হেলালের চাওয়া সব বাঁধা অতিক্রম করে ভবিষ্যৎ এ একটি সরকারি চাকরি করা। কাজ করতে চান নিজের মতো বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের জন্যও।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য হেলালের চাওয়া তাদের যেন সবাই ভালোবাসে। পরিবার, সমাজে অবহেলিত না হয়। পরিবার যেন তাদেরকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলে।
এমআই