প্রশংসা বাণী । শেখ ফাহমিদা নাজনীন
এ বছর হলো হজ্জ উদযাপন, কতগুলো হলো খরচা,
কেউতো জানে না মনের বেদনা অর্থের শোক কড়চা।
একটা, দুটো সে হাজার টাকা না, লাখ লাখ জড়ো করে,
মাস দুয়েকের কাজ ফেলে রেখে গেছিলাম কাবা ঘরে।
বন্ধু, স্বজন, আত্মীয় যারা বুঝবে না সেই ক্ষতি,
কতগুলো দিন ব্যাবসা বন্ধ, ধর্মে দিলাম মতি।
বাক্স ভর্তি সবার জন্য খোরমা, খেজুর এনে,
বিলিয়ে দিলাম স্বজনের মাঝে মাথাপিছু গুণে গুণে।
মেয়ের জন্য গয়না এনেছি মাত্র ছ'সাত ভরি,
ব্যাবসায়ী আমি আরবীয় সোনা আনতে কি ভুল করি?
হজ্জ থেকে ফিরে দু’মাসের ঘোরে দাড়ি বানিয়েছি বড়ো,
উঠতে বসতে জিকির-আজগার, তাসবিহতে জড়োসড়ো।
মসজিদ থেকে মাওলানা ডেকে মিলাদ দিলাম ঘরে,
মনে ভাবলাম জীবনটা দেবো এভাবেই পার করে।
রাজনীতি নামে কাদা ছোড়াছুড়ি, ক্ষমতা লাভের দ্বন্দ্ব,
গোপন পথের অর্থের চাকা, সব করে দেবো বন্ধ।
জনতা আমায় বেশ ক'টা দিন মাথায় তুলে রাখলো,
দেখা-সাক্ষাতে সালাম ঠুকলো, আলহাজ্ব বলে ডাকলো।
কাঙ্ক্ষিত কতো প্রশংসা বাণী, আবেগ আপ্লুত হই,
মনে মনে ভাবি, হজ্জ করে এসে আমি বুঝি আমি নই।
আগে শুধু এক পাতি নেতা হয়ে জীবন কাটিয়ে গেছি,
তার সাথে আজ হাজী নাম নিয়ে খোশমেজাজেই আছি।
জুম্মাবারে সিন্নি চড়াই, দরগাই জ্বালি বাতি,
দুটো পয়সা খরচা হলেও আমি যে মহান অতি।
জাঁকজমকে, ঠাকঠমকে কমতি রাখিনে কিছু,
যেখানেই যাবো গনজমায়েত থাকা চায় পিছু পিছু।
সহধর্মিণী চুলের গুচ্ছ ঘোমটায় ঢাকা থাকে,
হালকা মেকাপে কড়া লিপস্টিক, মুখটায় খোলা রাখে।
পর্দা-পুশিদা প্রথম পর্ব, চুল ঠিকঠাক ঢাকছি,
চুল দেখালেই পর্দা নষ্ট? ও পথ বন্ধ রাখছি।
বাইরে গেলেই লোকে বলে আহাঃ! ভাই-ভাবী ভারি ফিট,
সবার অন্তরে বসন্ত আসে, জুটিটা সুপারহিট।
এমনই করে মাস দুই পরে লম্বা দাড়িটা চুলকায়,
বউয়ের বড্ড এ্যালার্জি বাড়ে, হিজাব খুলতে মন চায়।
দাড়ি কেটে ছেটে নির্ঝঞ্ঝাটে ফিরে যাই নিজ অভ্যাসে,
বউ ফিরে যায় পুরনো পোশাকে, সাজসজ্জায় সন্তোষে।
ছ'মাসে, ন'মাসে পীরের দরগা, সিন্নি চড়িয়ে আসি,
জনতার মুখে ধন্যি ধন্যি শুনতেই ভালোবাসি।
আগে তো ছিলাম ছোটখাটো নেতা, পেছন সারির বাসি,
হজ্জ করে এসে বড়ো নেতা আজ চেয়ারের অধিবাসী।
এমনই করেই আলহাজ্ব আজ মস্ত বড়ো নেতা,
জনতার ভীড়, প্রশংসা বাণী জীবনের সাথে গাঁথা।
জনতার খাতে মূল্যটা পেতে যে জীবন হয় পার,
করুণাময়ের করুণার ধারা বাকি থাকে কিছু আর?
তার চেয়ে হোক জীবন আলোক প্রভুর পূণ্যমতে,
প্রভুর মমতা অবলম্বন, মিশে থাক প্রাণ স্রোতে।
মানুষের শত নিন্দামন্দ মাথা পেতে নাও হাজী,
হেসে পাড়ি দাও মরণ সাগর, রব যদি হন রাজি।
লেখক ও কবি: শেখ ফাহমিদা নাজনীন
সময় জার্নাল/আরইউ