আমায় যখন পরিয়েছিলে দুই বিনুনি ফ্রক,
বলেছি কি কেড়ে নিলে স্বাধীনতার হক?
জানতাম আমি এটাই আমার আত্মপরিচয়,
ঐ বয়সে ফ্রক পরবো, এমন ধারাই হয়।
হিন্দিভাষী, ইংরেজি বা চায়না, স্পেনীয়,
সব দেশেতেই কন্যা আমি দারুণ আদরনীয়।
আমি যখন একটু বড়ো, ওড়নাতে মুখ ঢাকি,
কুরআন আমায় শিক্ষা দিলো, শিক্ষা বজায় রাখি,
স্রষ্টা আমায় আদেশ দিলেন, শরীরখানি ঢাকো।
অজস্র চোখ চাইতে পারে, বাঁচিয়ে তাকে রাখো।
প্রভুর কাছে নামটি আমার যে উঁচুতে আছে,
সেথায় লেখা, জান্নাতি সুখ আমার পায়ের নীচে।
দেখে নিও কুরআন খুলে, কোথায় আছি আমি,
বিশ্বমাঝে সবকিছুতে, সবার চেয়ে দামী।
মহান যিশুর শিষ্য তুমি বাইবেলটা খোলো,
কোথায় আছে অসভ্যতা, একটু আমায় বলো?
দুঃখ, শোকে কালো গাউন অঙ্গে পরা চায়,
স্কার্পটাই ঢাকলে মাথা বোরকা হয়ে যায়।
হয়না বুঝি, ডিসেম্বরের হাড়কাঁপানো শীতে?
নাক, মুখ সব মুড়িয়ে যখন পা রাখো গীর্জাতে।
আগুন রঙা নিশান নিয়ে অভদ্রতার ঝোঁকে,
পথটা তোমার আটকায় না কেউ তো এসে রুখে।
কালো রঙের টুপি পরে মুসা নবীর ছেলে,
দাবী করো উচ্চে তুমি, সবাই এলেবেলে।
তাওরাতের ঐ মহান বাণী পড়ে দেখো ভায়া,
কোথায় আছে নির্বিবাদে অশ্লীলতার ছায়া?
শনিবারের প্রার্থনাতে ঢেকে ঢুকেই যাও,
সিনাগগের অন্তরালে উগ্রতা কি পাও?
উগ্রতাতো মনের ভেতর লালন করে রাখো,
প্রভুর আদেশ পাল্টে দিয়ে পাপের ছবি আঁকো।
তোমার পথে পা মাড়াতে রক্ত নিশান নিয়ে,
আসেনা কেউ মানবতার মাথায় আঘাত দিয়ে।
এই যে আমার সন্ন্যাসী ভাই, গেরুয়া বসনধারী,
তোমার ঘরের অন্তরালে বাস করে যে নারী,
সেও তো রোজ মন্দিরে যায় গলায় আঁচল দিয়ে,
দেবীর মতো সাজপোশাকে পবিত্রতা নিয়ে।
ঘাগরাখানি শরীর ঢাকে, ওড়না মাথায় তুলে,
মন্দিরে যায় রাধারাণী দেবীর বেদীমূলে।
তখনতো কেউ পথের মাঝে করোনা চিৎকার,
ওড়নাখানি কেড়ে নিতে ছোড়োনা ফুঁৎকার।
আমিই যখন মুখটা ঢাকি মাথায় হিজাব দিয়ে,
তখন কেবল তোমার গায়ে আগুন জ্বলে ঘিয়ে।
গেরুয়া রঙের বসনধারী বলছি তোমায় শোনো,
যতই করো চিল চিৎকার লাভ হবেনা কোনো।
আমরা তো ভাই খুব সাধারণ, নরম মনের নারী,
বারে বারে আঘাত দিলে মোড় ঘোরাতে পারি,
নরম মনের শক্ত ভিতে ভয়হীনা এক পাত্রী,
তিতুমীরের কন্যা আমি, বখতিয়ারের মাতৃ।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২।