আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকে চলমান হিজাব আন্দোলন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন সেখানকার হাইকোর্ট। সেই আদেশে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে আদালতের চুড়ান্ত রায় আসার আগ পর্যন্ত রাজ্যের কোনো স্কুল-কলেজে ধর্মীয় পোষাক পরে কোনো শিক্ষার্থী আসতে পারবেন না।
বৃহস্পতিবার কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রিতু রাজ আওয়াস্তি, বিচারপতি কৃষ্ণা এস, দিক্ষীত ও বিচারপতি কাজি জয়বুন্নেসা মহিউদ্দিনের সম্মিলিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটি একটি অন্তর্বর্তী আদেশ। হিজাব বিতর্ক নিয়ে প্রতিদিন আদালতে শুনানি হবে এবং এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় আসার আগ পর্যন্ত রাজ্যের সব স্কুল-কলেজে এই অন্তর্বর্তী আদেশ প্রযোজ্য হবে।’
আগামী সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘রাজ্যে অবশ্যই শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে এবং স্কুল-কলেজসমূহ অবিলম্বে খুলে দিতে হবে।’
কর্ণাটকে চলমান হিজাব আন্দোলন বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুগুলোর একটি। গত মাসে কর্ণটকের উদুপি জেলার একটি প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজের ছয় ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে ক্লাসে ঢুকতে বাধা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে এই সমস্যার সূত্রপাত ঘটে। রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সংবেদনশীল তিনটি জেলার একটি উদুপি; যা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডানপন্থী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অন্যতম শক্ত ঘাঁটি।
শ্রেণীকক্ষে হিজাব পরে ক্লাস করা যাবে কি না— তা নিয়ে ওই কলেজ কর্তৃপক্ষ ও মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে বিবাদ চলে, এর মধ্যেই উদুপির ওই কলেজের ছয় শিক্ষার্থীর শ্রেণীকক্ষের বাইরে বসে থাকার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় রাজ্যজুড়ে দানা বাঁধতে থাকে বিক্ষোভ।
অল্প সময়ের মধ্যে রাজ্যের অন্যান্য কিছু কলেজে হিন্দু শিক্ষার্থীরা গেরুয়া শাল পরে ক্লাসে আসতে শুরু করে। উভয় পোশাকই ক্যাম্পাসে পরা যাবে না, এমন নির্দেশনা জারি করতে বাধ্য হন কলেজ কর্মকর্তারা।
গত সপ্তাহে একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হিজাব পরা একদল ছাত্রীকে কলেজে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। উদুপি জেলার কুন্দাপুরের একটি প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এই ঘটনায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
কর্ণাটক ছাড়াও দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে হিজাব আন্দোলন।
একপর্যায়ে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। উদুপি সরকারি কলেজের ৫ জন নারী কর্ণাটক হাইকোর্টে শ্রেণীকক্ষে হিজাব নিষিদ্ধের বিপক্ষে পিটিশন দায়ের করেন।
বৃহস্পতিবার সেই পিটিশনের ওপর শুনানি হয়। সেখানেই এই অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এদিকে, আদালতের নিয়মিত শুনানিতে বিষয়টি উত্থাপনের জন্য সুপ্রিমকোর্টে এই পিটিশনের পক্ষে আবেদন করেছিলেন ওই ৫ নারী। তবে সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টে পিটিশনকারীদের পক্ষের আইনজীবী কপিল সিবালকে এ বিষয়ে ভারতের প্রধান বিচারপতি এন.ভি রামানা বলেন, ‘যেখানে কর্ণাটক হাইকোর্ট এই ব্যাপারটি দেখছে, সেখানে শুধু শুধু কেন আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব? এটা মোটেই ভালো দেখায় না।’
সূত্র: গালফ নিউজ
এমআই