ওয়াজেদুল হক, মেহেরপুর প্রতিনিধি:
প্রকৃতির অন্যতম এক অলংকার পাখি। আমাদের দেশীয় পাখির সাথে শীত প্রধান দেশের পাখি যখন অতিথি হয়ে আসে তখন সে অলংকারের শোভা যেন আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মাইলমারী গ্রামের পদ্মবিলে পরিযায়ী পাখিদের মিলনমেলা বসেছে। বিলের জলরাশীতে পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে পরিবেশ। শীতের শুরুতেই পদ্মবিলে আসতে শুরু করে পরিযায়ী পাখিরা। পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, চীনের জিনজিয়াং সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসে আমাদের দেশে। পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলি দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ যাচ্ছে মাইলমারী পদ্মবিলের পাড়ে।
শীতের শুরুতে সংখ্যায় কম হলেও শীত বাড়ার সাথে সাথে দেশ বিদেশী কয়েক হাজার পরিযায়ী পাখি এখন পদ্মবিলে অবস্থান করছে। পরিযায়ী পাখিদের সাথে পদ্মবিলের জল ও স্থলভাগ এখন মুখরিত পানকৌড়ি, বক, হরিয়াল, হারগিলা, রাতচোরা, বালিহাঁস, কাদাখোঁচা, ডাহুক, শামুকখোল, হটটিটি, ঘুঘুসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পাখির কলতানে। তবে এ বিলে পানকৌড়ি ও বালিহাঁস সংখ্যায় অনেক বেশি। এসব পাখির দলবদ্ধ বিচরণ মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদের। শুধু পাখিদের বিচরণই নয়, এলাকার দিগন্তজুড়ে বিস্তির্ণ মাঠের নানা ফসলের সাথে রুপবৈচিত্রের নানা রং বিমোহিত করে মানুষকে। অপরুপ মাইলমারী পদ্মবিলকে ঘিরে রয়েছে লক্ষীনারায়নপুর ধলা, নওপাড়া, কুলবাড়িয়া, হিজলবাড়ীয়া, হিন্দা, পলাশীপাড়া ও তেঁতুলবাড়িয়া গ্রাম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাইলমারী পদ্ম বিলে বদ্ধ জলে সহস্রাধিক পরিযায়ী পাখির অবাধ বিচরণ। জলাশয়ে পাখা ঝাপটে সুখ খুঁজছে তারা। কখনও পানিতে ভেসে থানা জলজ উদ্ভিদের উপর উঠে রোদে শুকিয়ে নিচ্ছে তাদের শরীর। কখনও কখনও মনের আনন্দে আকাশে উড়েছে এসব পাখিরা। তাদের কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠেছে প্রকৃতি। সকালে ও বিকেলে অধিক সংখ্যক পাখি জলাশয়ে অবস্থান নেয়। দিনের অন্য সময় আকাশে উড়ে কিংবা জলজ উদ্ভিদ জার্মানীর পাশে ভেসে খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করে। রাতে পাখিগুলো লোকালয়ে বাঁশের ঝাড়, মেহগনি গাছ, বা মাঠের বিভিন্ন গাছে অবস্থান করে। পাখিদের কলতানে আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা থেকে আশা দর্শনার্থীদের চিত্ত। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে ভীড় জমান মাইলমারী পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তবে, প্রশাসনিক ব্যবস্থা না থাকায় অসাধু পাখি শিকারীরা জাল দিয়ে পাখি শিকার করছে। পদ্ম বিলে চালিত ডিঙি কিংবা নৌকায় চড়ে কখনও কখনও তরুণরা খুব কাছাকাছি গিয়ে পাখি দেখার মজা অনুভব করে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, পরিজায়ী পাখি আমাদের অতিথি। মাইলমারী পদ্মাবিলে আসা পাখিদের আবাসস্থল নিরাপদ করা হবে।
বার্ড ক্লাবের সদস্য ও পাখি গবেষক এমএ মুহিত বলেন, গাংনী উপজেলাকে পাখিদের অভয়ারণ্য বললে ভুল হবেনা। শীতের শুরুতে আবাসিক ও পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলিতে গাংনীর বিভিন্ন জলাভূমি মুখরিত হয়ে থাকে। উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সংগঠন পাখিদের অভয়ারণ্য নিয়মিত দেখভাল করলেও শিকারীদের হাত থেকে বিশেষ করে পরিযায়ী পাখিরা রেহায় পায়না। শীত আসলেই শিকারীদের বিভিন্ন রকমের ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করতে দেখা যায়। গাংনীর বিভিন্ন জলাভূমিতে পর্যাপ্ত পরিমান ভেজিটেশন থাকায় পরিযায়ী পাখিরা এখানে বেশি ভীড় জমায়। আমরা দেখতে পাই শিকারীদের হাতে কিছু পরিযায়ী পাখি ধরা পড়লেও বক প্রজাতির পাখি ধরা পড়ে খুব বেশি। প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো শীতের শুরুতে পাখিদের নিয়ে জনসচেতনতামুলক অভিযান চালায় তাহলে আবাসিক ও পরিযায়ী পাখিরা শিকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অিফিসার মৌসুমী খানম জানান, পরিযায়ী পাখিরা সেই সাইপ্রাস সহ বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এখানে আসছে। আমরা তাদের রক্ষা করার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা নেবো। অসাধু পাখি শিকারীরা তাদের হত্যা করতে পারবেনা। খোঁজ নিয়ে এসব পাখিদের আবাসস্থলগুলো নিরাপদ করার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
সময় জার্নাল/এলআর