প্রাণের জোয়ার
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
সে কি গো তোমার কাজ নেই কোনো? সারাদিন ধরে বসে,
সারাদিন শুধু ঝিমিয়ে বেড়াও আলসেমি অভ্যাসে।
এই যে দেখোনা রাতটা পেরিয়ে পূবের আকাশ পানে,
কতো কথা ভাসে ভোরের বাতাসে, সূর্যোদয়ের গানে।
আঙিনার দ্বারে গুনগুন করে খুঁজে যায় মৌমাছি,
ফাগুন যখন দুয়ারে দাঁড়িয়ে, আমরা কে, কেমন আছি?
জলপাই গাছে বসে যে কোকিল কুহু কুহু কলতানে,
শীতে জবুথবু লোকালয় মাঝে প্রাণের জোয়ার আনে।
কান পেতে শোনো চমকে উঠবে! কোকিল যখন ডাকে,
তীক্ষ্ণ সে সুর পৌঁছাবে ঠিক উপলব্ধির বাঁকে।
যতই তুমি আলসেমি করো, যতই থাকো ঘুমিয়ে,
কোকিলের ডাক করে হাঁকডাক ঘুমটাকে দেবে ভাঙিয়ে।
আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠো দেখি, জানালাটা দাও খুলে,
দেখবে সুরেলা দখিনা বাতাস ছোঁয়া দিয়ে যাবে চুলে।
বাতাসের গায়ে হরেক রকম মিষ্টি সুবাস ভাসে,
বুনো ঝোপ ছেড়ে ফুলের গন্ধ গৃহীদের ঘরে আসে।
সুবাস তোমায় টেনে নিয়ে যাবে বুনো ঝোপটার কাছে,
দেখবে সেখানে ফুলের পসরা হাসিমুখে চেয়ে আছে।
একটু এগোও, সামনে দেখবে হলুদ সর্ষে ক্ষেতে,
বসন্ত যেন ভীড় করে আছে দারুণ উচ্ছ্বাসেতে।
পলাশের ডালে, ফাগুনের কালে মন দিয়ে দেখেছো কি?
দেখবে সেখানে লাল টকটকে ভালোলাগা দেয় উঁকি।
কৃষ্ণচূড়ার রঙে মাখামাখি কেটেছে যে ছেলেবেলা,
আজ কেন মুখে নিরাশার মেঘ? কেন বা তুমি একেলা?
বাড়ির পেছনে জামরুল গাছে গোটা শীতকাল ধরে,
সবুজ পাতারা বিবর্ণ হলো, কতো পাতা গেলো ঝরে।
পাতা ঝরে পড়া ন্যাড়া ডালপালা বুকেতে জাগালো ভয়!
রিক্ততা মনে দাগ কেটে গেলো, এ যেন তুমুল ক্ষয়।
শুষ্ক হাওয়ার শীতল ধাক্কা ছুঁয়ে গেছে মন যেন,
বসন্ত তাই রঙে রঙে গায়, এসে গেছি আর কেন?
দু'পা ফেলে তুমি ঘুরে এসো দেখি জামরুল তলা থেকে,
দেখবে কেমন ন্যাড়া ডালটাতে সবুজ উঠছে হেঁকে।
বাগানবিলাস কোন আহ্লাদে পথের ধুলোর পরে,
এতো রঙ নিয়ে নিত্য প্রভাতে ঝুরঝুরঝুর ঝরে।
এতো রিক্ততা, এতো জীর্ণতা, এতো যে বিষাদ ছন্দ,
এক ঝটকায় বসন্ত এসে ছড়ালো পুষ্পগন্ধ।
মরা ডাল সেও সবুজ পাতায় ঝলমলে হয়ে উঠলো,
আধমরা গাছ জীর্ণতা মুছে কুসুমিত হয়ে ফুটলো।
দুয়ারে তোমার প্রাণের জোয়ার, বসন্ত খায় দোল,
আর কেন তবে অবসাদে ডোবা, খুলে দাও সব আগল।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৭ জানুয়ারি ২০২২।