আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ইউক্রেন-রাশিয়ার সংকট ঘিরে তৈরি হওয়া উত্তেজনা দুই মাসের বেশি সময় ধরে ফুঁসছে। এই সংকট সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় অগ্রগতির তেমন কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখের বেশি সৈন্য সমাবেশ করেছে রাশিয়া। মস্কোর এমন রণসজ্জায় পশ্চিমারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, রাশিয়া যেকোনও মুহূর্তে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাতে পারে।
তবে ইউক্রেনে হামলা পরিকল্পনার অভিযোগ বারবার অস্বীকার করে মস্কো বলেছে, তারা ন্যাটো জোটের মিত্রদের আগ্রাসনের জবাব দিচ্ছে। পশ্চিমাদের এই সতর্কবার্তাকে ‘মৃগীরোগ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে রাশিয়া।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাল কীভাবে? দেখে নেওয়া যাক।
নভেম্বর ২০২১
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, ইউক্রেন সীমান্তে নতুন করে রুশ সৈন্য সমাবেশ করা হচ্ছে। কিয়েভ বলেছে, মস্কো এক লাখ সৈন্যের পাশাপাশি সীমান্তে ট্যাংক এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামও জড়ো করছে।
ডিসেম্বর ৭, ২০২১
ইউক্রেনে আগ্রাসন চালালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ডিসেম্বর ১৭, ২০২১
পূর্ব ইউরোপ এবং ইউক্রেনে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম স্থগিত, জোটে সাবেক সোভিয়েতভুক্ত ইউক্রেনের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তি বাতিলসহ পশ্চিমাদের কাছে বেশ কিছু নিরাপত্তা দাবি উপস্থাপন করে রাশিয়া।
জানুয়ারি ৩, ২০২২
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র কড়া জবাব দেবে বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কিকে পুনরায় আশ্বাস দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই সংকট সমাধানে কয়েকটি কূটনৈতিক বৈঠকের প্রস্তুতির ব্যাপারে টেলিফোনে কথা বলেন তারা।
জানুয়ারি ১০, ২০২২
কূটনৈতিক আলোচনার জন্য জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন। কিন্তু মস্কো বারবার নিরাপত্তার দাবি জানালেও ওয়াশিংটন তা প্রত্যাখ্যান করায় বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে যায়।
জানুয়ারি ২৪, ২০২২
সৈন্যদের প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি নতুন করে রণতরী এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েনের মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করে ন্যাটো। কিছু পশ্চিমা দেশ কিয়েভ থেকে দূতাবাসের অপ্রয়োজনীয় কর্মী সরিয়ে নেওয়া শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় সাড়ে ৮ হাজার সৈন্যকে সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়।
জানুয়ারি ২৬, ২০২২
রাশিয়ার নিরাপত্তা দাবির ব্যাপারে একটি লিখিত প্রতিক্রিয়া দেয় ওয়াশিংটন। এই প্রতিক্রিয়ায় ন্যাটোর ‘উন্মুক্ত-দরজা’ নীতির পুনরাবৃত্তি করা হয়। একই সঙ্গে মস্কোর উদ্বেগের বিষয়ে ‘নীতিগত এবং বাস্তবসম্মত মূল্যায়নের’ প্রস্তাব করে যুক্তরাষ্ট্র।
জানুয়ারি ২৭, ২০২২
ইউক্রেনে ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আক্রমণের বিষয়ে সতর্ক করে দেন জো বাইডেন। রাশিয়ার নিরাপত্তা দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে চীন ওয়াশিংটনকে উদ্দেশ্য করে বলেছে, মস্কোর ‘বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগ’, ‘গুরুত্বের সাথে নেওয়া’ উচিত।
জানুয়ারি ২৮, ২০২২
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার প্রধান নিরাপত্তা দাবিগুলোর সমাধান হয়নি। তবে মস্কো আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমাদের আতঙ্ক না ছড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এটি দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
জানুয়ারি ৩১, ২০২২
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ রুদ্ধদ্বার অধিবেশনে ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ব্যাপক বাকবিতণ্ডা হয়েছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিনডা থমাস গ্রিনফিল্ড নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে বৈশ্বিক নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।
মস্কো বারবার হামলার পরিকল্পনা অস্বীকার করা সত্ত্বেও ওয়াশিংটন এবং এর মিত্ররা যুদ্ধের ঢাক বাজাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রাশিয়ার জাতিসংঘ দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের হুমকি নিয়ে আলোচনা এক ধরনের উসকানি। পশ্চিমারা এটি চায়।
ফেব্রুয়ারি ১, ২০২২
ইউক্রেনে আগ্রাসনের পরিকল্পনা অস্বীকার করেন পুতিন এবং তার দেশের নিরাপত্তা দাবি যুক্তরাষ্ট্র উপেক্ষা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি ইতোমধ্যে পরিষ্কার যে, রাশিয়ার মৌলিক উদ্বেগের বিষয়গুলো উপেক্ষা করা হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২২
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ইউক্রেনে পুরোমাত্রার হামলা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক সক্ষমতার ৭০ শতাংশ প্রস্তুত করেছে রাশিয়া।
ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২২
মস্কোতে ম্যারাথন আলোচনার জন্য পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ইউক্রেন সংকটে উত্তেজনা ছড়াবে না রাশিয়া। কিন্তু ম্যাক্রোঁ এবং পুতিন উত্তেজনা হ্রাসের বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছানোর তথ্য অস্বীকার করে ক্রেমলিন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে মস্কো এবং প্যারিস কোনও ধরনের চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে না।
ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রুস এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের মধ্যে নিষ্ফল আলোচনা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এসে লাভরভ এই বৈঠককে ‘একজন মূক এবং বধির ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথন’ হিসাবে বর্ণনা করেন।
ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২
বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান বলেন, মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি বেইজিং অলিম্পিক শেষ হওয়ার আগে কয়েক দিনের মধ্যে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হতে পারে।
মিত্রদের আশ্বস্ত করতে পোল্যান্ডে অতিরিক্ত ৩ হাজার সৈন্য মোতায়েনের নির্দেশ দেয় পেন্টাগন। এদিকে, বিশ্বের কয়েকটি দেশ নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ার আহ্বান জানায়। যুদ্ধের সময় নাগরিকদের সামরিকভাবে সরিয়ে নেওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে না বলেও কয়েকটি দেশ জানায়।
ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনায় অংশ নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জো বাইডেন বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ‘ব্যাপক মানবিক দুর্ভোগ’ তৈরি করবে। তবে পশ্চিমারা কূটনৈতিকভাবে এই সংকটের অবসানে বদ্ধপরিকর এবং অন্যান্য সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্যও সমানভাবে প্রস্তুত।
ইউক্রেনের সামরিক জোটে যোগদান নিষিদ্ধ এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে ন্যাটোর সেনা প্রত্যাহারে রাশিয়ার দাবির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা এই সামরিক সন্তোষজনকভাবে সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ করেন পুতিন।
পুতিনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক শীর্ষ সহযোগী ইউরি উশাকভ বলেছেন, কয়েক মাস ধরে উত্তেজনা বাড়লেও সম্প্রতি সেই পরিস্থিতিকে হাস্যকর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, রাশিয়ার ওপর সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা উল্লেখ করেছেন বাইডেন। কিন্তু রুশ নেতার সাথে মোটামুটি দীর্ঘ আলোচনায় এই সমস্যাটি কেন্দ্রে ছিল না।
সূত্র: এপি, আলজাজিরা।
এমআই