দুই জীবন
-শেখ ফাহমিদা নাজনীন
জীবন নদীর দুই পাড় জুড়ে দুই মানুষের বাস,
একটা মানুষ ভারি সুনিপুণ গার্হস্থ্য অভ্যাস।
স্বামী-সন্তান, শত পরিজন আগলে রেখেছে তাকে,
পরিচয়টুকু লীন হয়ে গেছে সম্পর্কের বাঁকে।
কেউ তাকে ডাকে মা-জননী বলে, কেউবা মিষ্টি বউ,
গরলে পৃথিবী উথলিয়ে ওঠে, তার অন্তরে মউ।
ভারি আলাভোলা, পরের হাসিতে নিজের শান্তি খোঁজে,
আস্তিকতার পদ্ধতি চলে বৈষয়িকের কাজে।
নিজেকে সে ভারি সাধারণ ভেবে পরার্থে হয় লীন,
পাপের ধমকে উদ্ধত, যেন তেজস্বী সঙ্গীন।
ব্যাক্তিত্বের এমনই আলোক, বিগলিত হয় লোকে,
ঘরোয়া আসরে তার সন্নিধি বিশুদ্ধ ছবি আঁকে।
তবু বলি, তার সমস্ত রঙ সামান্য পরিসরে,
বিপুল পৃথিবী অজ্ঞাত থাকে, চিনতে পারে না তারে।
মিছে তার কাছে খ্যাতিমান হওয়া, সমারোহ ভরা নাম,
লক্ষ্যটা তার পৃথিবী ছাড়িয়ে পূণ্য অমরধাম।
যতটুকু প্রভু দিয়েছেন তাকে তাতেই সে রাজরানী,
বিশ্বাসী প্রাণে শান্তির সুধা রবের ঐশী বাণী।
নদীর ঐ পারে যে জন রয়েছে, বিখ্যাত তার নাম,
সুকণ্ঠী তিনি, সুর সাধকেরা দিতে জানে তার দাম।
মার্জিত তিনি চলনে-বলনে, হিসাবের প্রতিমূর্তি,
জীবনযাপনে অঙ্কের মাপ, উধাও মনের ফুর্তি।
রোজ ভোরবেলা গানের রেওয়াজ, টকমিষ্টিতে বাঁধা,
খাবারদাবারে কতো যে আগল, জীবনটা যেন ধাঁধাঁ।
ঠান্ডা পানি সে ছোঁবেনা কখনো, গরমে ওষ্ঠাগত,
কতো রাত জেগে গানের জলসা, ঘুমে প্রাণ অবনত।
স্বামী-সন্তান, বিয়ের বাঁধন, আসেনি জীবনে তার,
সুরের সাথেই আত্মাটা বাঁধা, সুরই কণ্ঠ হার।
কতজনা তার কন্ঠের মোহে ডুব দিয়ে ভোলে শ্রান্তি,
কেউতো জানেনা শিল্পীর মনে জমে থাকে কতো ক্লান্তি।
ঘুমহীন রাতে কিংবা প্রভাতে সঙ্গীহীনা সে ভাবে,
একাকী জীবন অভিশাপ যেন, এতো নামে কি আর হবে?
ফের যদি পাই নতুন জন্ম, হতাম ছাপোষা নারী,
স্বামী-সন্তানে, আপন অঙ্গনে, প্রশান্তি হতো ভারি।
অথচ জীবন একটাই হয়, মৃত্যুও একবার,
নদীর ঐ পারে সরল সুখটি, এ পারে নামের ভার।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২।