বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০২২
সত্য হয়ে জ্বলো
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
বিকেলবেলা সূর্য যখন নদীর বুকে চুপ,
ডিগবাজী খায় কমলা রঙে ছড়িয়ে দিয়ে আলো,
মাছরাঙাটা কঞ্চি ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সে নিশ্চুপ,
বলছে বিকেল, ওগো মানুষ, আছো তো বেশ ভালো?
ও পৃথিবীর বাসিন্দারা, কি পেলে দিনশেষে?
স্বার্থ বিহীন মানবতা? অবক্ষয়ের ঢেউ?
রক্ষাকারী ভাবছো যাকে আজন্ম অভ্যাসে,
বিপদ যখন ঝাঁপিয়ে পড়ে রয় কি পাশে কেউ?
এই যে দেখ আমরা যারা বনবাদাড়ে আছি,
নদীর বুকে ঢেউ বয়ে যায় বক দাঁড়িয়ে কূলে,
পরগাছা কয়, অশ্বত্থ ডালের রসটা নিয়ে বাঁচি,
মাছ নিয়ে যায় বক তবু কেউ দেয়না তাকে শূলে।
বটগাছটা ঠাঁই দাঁড়িয়ে এই যে সারাদিন,
আসতে যেতে কতো পথিক গা জুড়িয়ে গেলো,
ওগো মানুষ, তার কাছে যে রইলো জমা ঋণ,
সেই কথাটা ভেবে দুটো বীজ পোঁতা কি হলো?
এই যে তোমার দোরের পাশে একটুখানি ভূমি,
তাচ্ছিল্যে এঁটো কাঁটা রোজ ফেলো তার পরে,
দুটো গোলাপ, শিউলি চারা লাগাও যদি তুমি,
দুমাস গেলেই দেখবে কেমন ফুল পড়ছে ঝরে।
তোমার গাঁয়ের রাঙা পথে দোনলা বন্দুক,
ঝুলিয়ে ঘাড়ে শিকারী এক এলো সাহেব সেজে,
তার তোয়াজে তোমার যেন অবারিত সুখ,
আত্মভোলা মানুষ তুমি তাতেই থাকো মজে।
বনের পাখি, বটগাছটা, বিকেলবেলার নদী,
আচ্ছা সাহেব, আপনিই ঠিক, বলছে না তো কেউ,
তোমার প্রাণের দাসত্বে আজ জী হুজুরের গদি,
আর কতকাল পুষবে সেথা নতজানুর ঢেউ?
ভয়াল মেঘের বুকটা ছিড়ে সূর্য যেমন ওঠে,
তেমনি করে মানুষ তুমি শিরদাঁড়াটা তোলো,
সূর্য তোমায় সাহস দিলো, সেই সাহসে ছুটে,
মানব গড়া তন্ত্র ছেড়ে সত্য হয়ে জ্বলো।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২৭ জানুয়ারি ২০২২।