শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট: ওরা মানুষ না। ওরা আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমার সন্তানের কি দোষ? ওতো ছোট মানুষ। ওকে কেন মারধর করলো। আমি ওদের সবার বিচার চাই। এভাবে কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বলছিলেন দিলরুবা আক্তার টুম্পা (২৫) নামে এক গৃহবধূ।
লালনিরহাটের হাতীবান্ধায় যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় ছুরি দিয়ে দিলরুবা আক্তার টুম্পা (২৫) নামে এক গৃহবধূর পায়ের রগ কেটে দেয়ার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ছোট্ট শিশু সন্তাও। আহত মা-ছেলে বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া এ ঘটনাটিকে ধামা-চাপা দেয়ার চেষ্টা করছে একটি প্রভাবশালী মহল।
সোমাবার (২৯ মার্চ) দুপুরে আহত দিলরুবা আক্তার বাদী হয়ে প্রাণকে প্রধান আসামী করে আরও দুই জনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এর আগে শনিবার (২৭ মার্চ) রাতে উপজেলার টংভাঙ্গা ইউপির পশ্চিম বেজ গ্রাম এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।
এদিকে সোমবার (২৯ মার্চ) সকালে ব্রাক মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচীর এইচ আর এল এস অফিসার আজমিন নাহার উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে গিয়ে আহত টুম্পার খোজ খবর নেন। এ সময় টুম্পাকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেন ও সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন।
অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার পশ্চিম বেজ গ্রামের মোকলেছুর রহমানের ছেলে অছিউর রহমান প্রাণ(২৭), প্রাণের ছোট ভাই মুরাদ হোসেন মন (১৮) ও তার মা মালতী লতা (৪৫)।
আহত দিলরুবা আক্তার টুম্পা উপজেলার সিংগীমারী ইউনিয়নের দক্ষিন গড্ডিমারী গ্রামের মৃত মোফাজ উদ্দিনের মেয়ে এবং টুম্পার শিশু সন্তান ইবনে মেহমেদ।
এজহার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫ বছর আগে অভিযুক্ত অছিউর ও টুম্পার বিয়ে হয়। এরই মধ্যে তাদের সংসার ভালোই চলছিলো। কিন্তু বাধ সাধে শাশুড়ি মালতি। টুম্পাকে বাপের বাড়ি থেকে ৫ লক্ষ্য টাকা আনতে চাপ দেয়। টুম্পার সুখের কথা চিন্তা করে তার ভাইয়েরা ধার-দেনা করে ৩ লক্ষ্য টাকা যোগাড় করে দেয়। এরই মাঝে তাদের ঘর আলো করে জন্ম শিশু সন্তান মেহমেদ। কিন্ত এরই মাঝে আবারো ২ দুই লক্ষ টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে প্রাণ। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার স্থানীয় ভাবে শালিসি বৈঠকও হয়। পুনরায় প্রাণ আরও ২ লক্ষ টাকা আনতে বলে। এতে টুম্পা রাজি না হলে গত শনিবার শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। মা, ছোট ভাই ও প্রাণ মিলে বাশের লাঠি দিয়ে শুরু করে মারধর।
এর এক পর্যায়ে প্রাণ ধারালো ছুড়ি দিয়ে কোপ মারতে গেলে টুম্পা বিছানার উপর শুয়ে পরে। এ সময় মা ও ভাইয়ের সহযোগীতায় উক্ত ধারালো ছুড়ি দিয়ে টুম্পার পায়ের রগ কেটে দেয়। টুম্পার আত্ম চিৎকারে স্থানীয়রা টুম্পার ভাই-চাচাদের খবর দিলে তারা ছুটে এসে থানা পুলিশের সহযোগীতায় টুম্পাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
ব্রাক মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচীর এইচ আর এল এস অফিসার আজমিন নাহার বলেন, আমি সেখানে গিয়েছিলাম। এটা মানবাধিকার বিরোধী কাজ। যৌতুকের জন্য নারী নির্যাতন কোন ভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। টুম্পাকে আইনগত ভাবে যথেষ্ট সহযোগীতা করা হবে। এছাড়া কোন ভাবে যেন আপোষ মিমাংষা করা না হয়। টুম্পা সাথে যা হয়েছে তা ক্ষমার
অযোগ্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিলরুবার স্বামী অছিউর রহমান প্রাণ ঘটনাটি অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাদের মধ্যে কথা কাটা-কাটির এক পর্যায়ে আমি তাকে ধাক্কা মারলে সে পড়ে যায় এবং সুকেজের গ্লাসের সাথে পায়ে আঘাত লাগলে পা কেটে যায়। আমাকে এবং আমার পরিবারকে ফাঁসানোর জন্য তার পরিবারের লোকজন এসব বলছেন।
এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে টুম্পাকে উদ্ধারকারী হাতীবান্ধা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম বলে, আমি আবারো সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে টুম্পার খোজ খবর নিয়েছি। থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে হাতীবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ এরশাদুল আলম বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। এখনো পর্যন্ত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সময় জার্নাল/আরইউ