ডা. মোঃ জোবায়ের মিয়া :
বিষন্নতা বা ডিপ্রেসন(Depression) একটি আবেগজনিত মানসিক রোগ।
আমাদের চলার পথে কখনো কখনো, কারনে অকারনে মন খারাপ হয়। পারিবারিক কিংবা ব্যক্তিগত জীবনের জটিলতা, প্রিয়জনের বিচ্ছেদ অথবা মৃত্যু আমাদের বিষাদগ্রস্ত করে তোলে। এটি প্রকৃতির নিয়মেই এক সময় সহনীয় হয়ে উঠে। আমরা আবার স্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি।
বিনা কারনে কিংবা সামান্য কারনে যদি বিষন্নতা আসে এবং অনেকদিন ধরে থাকে তাহলে আমরা তাকে বিষন্নতা রোগ বলে থাকি।
এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সব সময় মন মরা থাকেন। যদি প্রশ্ন করা হয়, দিনের বেশীর ভাগ সময়, আপনার মনের অবস্থা কেমন থাকে? তাহলে উত্তর আসে, বেশীর ভাগ সময় তিনি বিষন্ন থাকেন বা তার কিছু ভালো লাগেনা অথবা সে মনে শান্তি পায়না।
উন্নত বিশ্বে মন খারাপকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয় আমাদের দেশের রোগীরা কিন্ত এ ব্যাপারটাকে ততটা গুরুত্ব দেয়না। অনেক সময় যে রোগী সে কস্ট পায় কিন্ত কাছের লোকজন বোঝতেও পায়না। কারণ আমরা সাধারনত শারীরিক অসুস্থতা বা দূর্বলতা কে বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকি।
বিষন্নতার আক্রান্ত ব্যাক্তির লক্ষণঃ
বিষন্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তিগনের সাধারণত কাজ কর্মের প্রতি আগ্রহ কিংবা কাজে আনন্দ থাকেনা। ঠিকমত ঘুম হয়না। ক্ষুধা কমে যাবার ফলে দেহের ওজন কমে যায়। অনেকের ঘুম এবং খুধা বেড়েও যেতে পারে। সব সময় তিনি ক্লান্তি ও শক্তিহীনতা বোধ করেন। কখনো অহেতুক অস্থিরতা কিংবা অতি মন্থরতা প্রকাশ করেন। রোগী নিজেকে সব সময় অযোগ্য ও অপরাধী বলে ভাবতে থাকেন। তার কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করা কিংবা মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা কমে যায়। রোগী প্রায়শই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। অনেক রোগী আত্মহত্যা করার কথা চিন্তা করেন। কারো কারো আত্মহত্যার চেস্টা /প্রবণতা দেখা যায়। কেউ কেউ আত্মহত্যা করেও থাকেন। গবেষণায় দেখা যায়, শতকরা চল্লিশ ভাগ আত্মহত্যার কারন হলো বিষন্নতা রোগ। অথচ আমরা যদি প্রথমেই এই রোগ সনাক্ত করে সঠিক চিকিতসা দিতে পারি তাহলে এই সমাজের অনেক মানুষের আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা যায়।
বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতেই বিষন্নতারোধী ঔষধ সহজলভ্য হয়েছে। সঠিক মাত্রা আর মেয়াদ অনুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ মতো সেবন করলে বিষন্নতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সেই সাথে সাইকোথেরাপি/কাউন্সেলিং নিলে রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।
ডাঃ মোঃ জোবায়ের মিয়া
সহকারী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রি)
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।