আজিমপুর গোরস্তানের মাঝ বরাবর যে রাস্তাটা চলে গেছে,
দু'পাশে অসংখ্য মানুষ শুয়ে আছে,
সহস্র কি'বা লক্ষের কোটা ছাড়িয়ে
অজস্র মানুষের সম্মিলিত উদ্যান।
তারা গাদাগাদি করে আছে,
একটা ঝুড়ির মাঝে ঠেসে ভরে রাখা অজস্র গোলাপের পাপড়ির মতো।
অথচ কি নৈশব্দ!
কেবল পাখির ডাক, দু'একটা ঝিঁঝি পোকার তীক্ষ্ণ কাতর ধ্বনি
আর বাতাসের এলোমেলো শব্দ।
ও পথে সহজে তুমি যাবেনা,
যদি যাও, তবে বড্ড সন্তর্পণে,
যেন রাস্তাটা ফুরোলেই বাঁচি।
তবু তুমি একদিন যেও ঐ পথে,
কোনো এক ফাগুনের কুয়াশা মোড়ানো ভোরে।
হয়তো তখনো মসজিদের শেষ মুসুল্লীটি বসে আছে জায়নামাজে,
হয়তো সূর্য উঠি উঠি করেও একটু দম নিয়ে নিচ্ছে।
কুয়াশার পাতলা চাদরে ঢেকে আছে চরাচর,
সেই আলতো আলোয় তুমি হেঁটে যেও
ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো ভাবলেশহীন।
ভোরের শিরশিরে হাওয়া তোমার কানে কানে বলে যাবে,
ঐ তো ওখানেই শুয়ে আছে টগবগে ছেলেটি –
শহীদ রফিক!
একবার তবে তুমি যেও তার পাশে,
কান পেতো কবরের ঢালাই পলেস্তরার গায়ে।
মাটির গভীর থেকে উঠে আসা হাহাকার শুনে নিও।
গতরাতে যে ভাষায় স্বপ্ন দেখেছিলে,
যে ভাষায় ভেবেছিলে আগামীর পথরেখা,
সে ভাষার মর্মান্তিক মৃত্যুর করুণ আর্তনাদ শুনতে পাবে তুমি,
শুনতে পাবে হিন্দি, ইংরেজি কি'বা আরও কিছু আরোপিত ভাষার
এক জগাখিচুড়ি কথামালা।
যেন বিপুল আক্রোশে কোনঠাসা করে রেখেছে
তোমার মাতৃভাষার প্রিয় শব্দাবলী।
শহীদ রফিকের ঐ বাসস্থানের পাশে,
দুদণ্ড দাঁড়াতে পারবে কি, গৌরবোজ্জ্বল মুখে?
তুমি তো কেবলই এক মনিহারা ফণী,
স্বাধীনতাহীন প্রিয় স্বদেশবাসী।
সময় জার্নাল/আরইউ