স্বৈরাচার এরশাদ নেই কিন্তু আছে তার বানিয়ে দেওয়া সব আচার এখনো বহাল তবিয়েতে চালু আছে। এই যেমন প্রভাত ফেরির বদলে রাতে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির কথা আমরা সবাই জানি। এই ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রথমবারের মতো ১৯৫৩ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়।
ওই দিন ঢাকার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা খুব ভোরে ছাত্রাবাসগুলো থেকে বের হয়ে খালি পায়ে ফুল হাতে আসেন শহীদ মিনারে। এভাবেই প্রভাতফেরির মাধ্যমে শহীদ দিবস পালন শুরু। এরপর সেটা চলতেই থাকে।
মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে যে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল ভাষা শহীদদের রক্তে সেই রাজপথে জুতা পায়ে হেঁটে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন না এমন চিন্তা থেকেই খালি পায়ে প্রভাতফেরির প্রথা চালু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে জাতীয় সব নেতা প্রভাতফেরিতে যোগ দিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছেন। কিন্তু স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতায় আসার পরে রাতে ফুল দেওয়ার সংস্কৃতি চালু করেন বলে জানা যায়। কারণ, তিনি সকালে বা দিনের বেলা ফুল দিতে এলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে পড়বেন এই কারণে রাত ১২ টা ১ মিনিটে শ্রদ্ধা জানানোর সংস্কৃতি চালু করেন।
রাষ্ট্রধর্মের মতো এরশাদের সেই প্রথা আজো টিকে আছে। গণতান্ত্রিক সরকারগুলো সব ক্ষমতায় আসলেও রাতের বেলা শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর সংস্কৃতি আর চালু হয়নি।
ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিকের একটা সাক্ষাতকার পড়েছিলাম যেখানে তিনি বলেছেন, ‘১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো আমরা শহীদ দিবস পালন করি। দিবসটি পালন শুরুই হয়েছিল প্রভাতফেরি দিয়ে। বাংলা বর্ষ গণনায় দিনের শুরু হয় সূর্যোদয় থেকে। কিন্তু খ্রিস্টাব্দ গণনার ক্ষেত্রে দিন শুরু হয় রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে। ২১ ফেব্রুয়ারি যেহেতু ভাষা ও স্বাধিকারের বিষয়, সেহেতু প্রভাতফেরিটা ভোরবেলায়ই করা উচিত বলে আমি মনে করি। ’
আমিও তাই মনে করি। আসলে আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি, জাতীয় সংগীতের এই লাইনগুলোর পর দ্বিতীয় যে গানের সুর হৃদয় কাঁপিয়ে দেয় সেটি, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি! কী কথা, কী সুর! যেন শিরায় শিরায় ছড়িয়ে যায় কথাগুলো। চোখ ভিজে যায়।
আমি মনে করি এই গান গাইতে গাইতে প্রভাতফেরির মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারি পালন শুরু করাটা খুব কঠিন কাজ নয়। আমি মনে করি খালি পায়ে হাতে ফুল নিয়ে প্রভাত ফেরির মধ্যে দিয়ে দেশকে ভালোবাসার যে শুরু আর কোন কিছুর সাথেই তার তুলনা হতে পারে না। আশা করি নীতি নির্ধারকেরা ভাববেন।
আমি চাই সাধারণ মানুষের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই সকালেই শহীদ মিনারে ফুল দিক। ভোরবেলায় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গাইতে গাইতে সবাই শহীদ মিনারে যাচ্ছে এর চেয়ে সুন্দর আর কোন দৃশ্য নিশ্চয়ই হতে পারে না!
সময় জার্নাল/আরইউ