আলী আহমাদ মাবরুর :
ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান সামরিক অভিযান নিয়ে নানামুখী বিশ্লেষণ পাওয়া যাচ্ছে। এর বাইরে, আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে, ইউক্রেনে ইসলামের একটি পুরনো ও বর্নাঢ্য ইতিহাস রয়েছে। ইসলাম ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ১৫ শতকে ক্রিমীয় খানাত প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউক্রেনে ইসলামের সোনালী অধ্যায়ও রচিত হয়।
ইউক্রেনের সিংহভাগ মানুষ খৃস্টান। এর বাইরে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মই হলো ইসলাম। মুসলিমদের অধিকাংশই সুন্নী হানাফী মাজহাবের অনুসারী। নৃ -তাত্বিক পরিচয় বিশ্লেষণ করলে এই মুসলিমদের বেশিরভাগই তাতার। ২০১২ সালে আনুমানিক ৫ লাখ মুসলমান ইউক্রেনে বাস করত, যার মধ্যে ৩ লাখ ক্রিমীয় তাতার ছিল। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বশেষ এক জরিপে ইউক্রেনে ১০ লাখ মুসলিম আছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।
১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের সময় মুসলিমরা ক্রিমিয়ার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ ছিল। ক্রিমিয়ার প্রায় সমস্ত প্রধান শহরে উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যা ছিল। ১৯৪৪ সালে জোসেফ স্টালিন এই মুসলিমদের বিরুদ্ধে নাৎসি জার্মানীকে সহায়তার অভিযোগ করলে ওই অজুহাতে ক্রিমিয়ার মুসলমানদের গণ নির্বাসনে পাঠানো হয়।
সেই সময়ে প্রায় ২ লাখের বেশি ক্রিমীয় তাতারকে মধ্য এশিয়ায় নির্বাসিত করা হয়। প্রাথমিকভাবে তাদের ঠাই হয়েছিল উজবেকিস্তানে। এই নির্বাসনের কারণে এক লাখের বেশি মুসলিম অনাহার বা রোগে মারা যায়। মুসলিমরা নির্বাসনে যাওয়ায় তাদের যাবতীয় সম্পক্তি রুশরা অধিগ্রহণ করে নেয়। ১৯৬৭ সালে অর্থাৎ স্ট্যালিনের অভিযোগ উত্থাপনের প্রায় ২৩ বছর পর ক্রিমিয় মুসলিমদেরকে নাৎসিকে সহায়তার অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়া হয়। কিন্তু এরই মাঝে ইউক্রেনের ভৌগলিক ও জনসংখ্যা কাঠামোতেই অনেক পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলা হয়। ইউক্রেনে মুসলিমদের আধিক্য নষ্ট করে দেয়া হয়।
১৯৯১ সালে ইউক্রেনীয় স্বাধীনতার পর থেকে সোভিয়েত যুগের তুলনায় ক্রিমীয় তাতারদের ক্রিমিয়ায় প্রত্যাবর্তন বেড়েছে। যদিও ইউক্রেনের মুসলিম জনসংখ্যা বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত, তবে বেশিরভাগই তাতার বংশোদ্ভূত। ২০১২ সালে সৌদি আরবে ইউক্রেনীয় ভাষায় কুরআনের প্রথম সম্পূর্ণ অনুবাদের একটি অগ্রিম অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। বর্তমানে ইউক্রেনে ছোট বড়ো মিলিয়ে প্রায় শ’খানেক মসজিদও আছে। অন্যদিকে, ২০১৪ সালে রাশিয়ার অভিযানের পর ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়া নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে নেয়।
আল্লাহ তাআলা ইউক্রেনের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে হেফাজত করুন। আমিন।