`আমি'
- মোশাররফ শরিফ
বেচে আছি তাই, জীবন নদীতে ভাসি
ভেসে ভেসে ঊনষাট, এতটা জীবন!
শৈশবে-হাসানপুর, গোমতীর তীর
উঠোনে বর্ষার পানি, মাছের মিছিল,
বাতাসে বাঁশির সুর, বিরহ-বিধুর
ক্ষেতের সরু আইল, আব্বার আঙুল।
একাকী বাঁশবাগান-জোসনার আলো
পুকুরে পূর্ণিমা, কোমল কচুরিপানা
লাল-সাদা জামরুল, লাল লটকন
সকালে কাচারি ঘরে, দাদার মক্তব
আরবি-আদর্শলিপি, জীবনের পাঠ
ভালো হয়ে চলি যেন, সারা দিনমান।
ঊনিশশত সত্তুর-রোদেলা দুপুর
ছল ছল মেঘনার জল, অশ্রুজল
কত ভাংগা হাট, স্মৃতিময় ধুধু মাঠ
গ্রামের বিদায় ক্ষন, বিরহী শৈশব।
ফেরিঘাটে কলরব, নদীর কল্লোল
অজানা শহর, দূরের দিনাজপুর।
দালান-পাথর ঘর,খেয়ালী খোঁয়াড়,
ঝাঁঝাল স্ট্রিটলাইট, বেশুমার হাট,
রিকশার টুংটাং, নির্ঘুম শহর
দীর্ঘ দীর্ঘ ফুটপাথ-চেয়ে থাকে চোখ
কোলাহল-কলতান,আনন্দ-বিচ্ছেদে
কেটে যায় বালকের শহুরে জীবন।
অকস্মাৎ জ্বলে উঠে শহর-মুখশ্রী
শহরময় গুলি-পটকা, প্রানের খটকা
বঙ্গবন্ধু-সাতমার্চ, মুক্তির পতাকা
লাল-সবুজ-হলুদ, ঘরে ঘরে দুর্গ।
কাঞ্চন নদীর মৃত্যুজয়, প্রতিরোধে
মুক্তিযোদ্ধা,জাগ্রত জয়,জয় বাংলা।
বেচে আছি তাই, জীবন নদীতে ভাসি
গোমতীর জলে, কদম বৃক্ষের বুকে
আমি মুখোশ বর্জিত-মানুষের বেশে
গায়ের কিষাণ,করি কবিতার কোমল কর্ষণ।
পৃথিবীর বুকে,মায়াবী অক্ষরে,পদচিহ্ন আঁকে
চেতনার দ্যোতনায় সময়ের সোনার সন্তান।
(২৪/০২/২২, ধানমন্ডি, ঢাকা)