শুকনো জলার ধারে আমি তাকে দেখলাম,
দাঁত, নখ, থাবা সমেত, মৃত্যুদুতের মতো,
তার সমস্ত শরীর ব্যাপি হলুদ কালো ডোরার ফাঁকে
হিংস্রতা যেন ফুটে ফুটে বেরিয়ে আসছে।
যে চোখ রাত্রিবেলা জলজল করে জ্বলে,
যে চোখে নৃশংসতা ঢেউ খেলে যায়,
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যে চোখে চোখ রাখার দুঃসাহস আজও কারো হয়নি,
আমি দেখলাম সে চোখে ভয়, আকুলতা কি'বা ভাবলেশহীনতা।
জঙ্গলের নরম কাদায় যে চিহ্নটুকু দেখলেই নিজেকে ভাগ্যবান মনে হতো একসময়,
জলার কাদামাটিতে তার পায়ের চিহ্ন তখনও সুস্পষ্ট।
সে হঠাৎ ধারালো দাঁতগুলি খুলে প্রকাণ্ড হা করলো মুখটাতে।
আমি নিখুঁতভাবে তার মাড়ি, জিহবা এমনকি আ'ল জিহবা পর্যন্ত দেখতে পেলাম।
সর্বাঙ্গ কাঁটা দিয়ে উঠলো!
আমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে অরণ্যরাজ,
মাত্র দু'ফুট ব্যাবধানে।
প্রকাণ্ড হা'টা খুললো সে।
যে হা মৃত্যুর প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে,
আজ সে হা এর মাঝে ঘুমের শীতলতা,
হাই তুললো অরণ্যরাজ।
আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম শক্তির আধার, হিংস্রতার কেন্দ্রবিন্দু,
অথচ কি ভাবলেশহীন!
একটু দূরেই খুঁটির সাথে বাঁধা আছে একটা ছাগলছানা,
সে ব্যাচারা আজ সকাল থেকে কেবল ত্রাহি ত্রাহি ডাক ছেড়ে চলেছে।
চোখের সামনে মনুষ্য ও ছাগশিশু,
কি অপূর্ব খাদ্য সম্ভার!
তবু জন্তুটি নির্বিকার দাঁড়িয়ে।
দাঁড়িয়ে আছে চার-পাঁচ হাত দৈর্ঘ্যে-প্রস্থের একটা লোহার খাঁচার মাঝে।
গরগর করে উঠলো সে,
তার সে গর্জনে ধমক নয় বরং অক্ষম অসহায়ত্ব ঝরে পড়লো।
ফাঁদপাতা শিকারীর দল পাশেই বসে আছে,
বন কর্মকর্তার গরাদযুক্ত গাড়ির অপেক্ষায়।
একদল উল্লসিত শিকারী, তারা জয়ের আনন্দে মত্ত।
আমি দাঁড়িয়ে আছি পৃথিবীর আদি ও অকৃত্রিম এক নৃশংস জন্তুর সামনে,
সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে ছোট্ট জঙলা গাঁয়ে।
আচমকা মনে হলো গোটা পৃথিবীটা যেন মস্ত এক সুন্দরবন।
এখানে অজস্র হিংস্র শ্বাপদেরা মারাত্মক গর্জনে বিভীষিকা ছড়িয়ে চলেছে।
লোহার গরাদগুলো এখনো তৈরি আছে,
শুধু সাহসী শিকারী কেউ কোত্থাও নেই।
সময় জার্নাল/আরইউ