‘ পিতা ’
আমি একজন নিঃসঙ্গ মানুষকে চিনি,
তিনি পা রেখেছিলেন এই বিস্তীর্ণ পৃথিবীর এককোণে,
নিঃসঙ্গতার চাদর গায়ে একমাত্র সঙ্গিনীকে খুঁজে ফেরার তাড়নায়,
রবের ক্ষমার মূর্ছনাতে, তাঁর সান্নিধ্যে ফিরে যাবার আকুলতায়,
তিনি পা রেখেছিলেন এই পৃথিবীর পরে।
তিনি এসেছিলেন বেহেশত হতে,
শুধু আমাদের আনতে হবে বলে,
তিনি এসেছিলেন পার্থিব জীবনকে
সহজসাধ্য করার কলাকৌশল শেখাতে,
এসেছিলেন আজন্ম শত্রুকে পরাস্ত করার পবিত্র বাতিটাকে জ্বালাতে।
পৃথিবীর কোল জুড়ে প্রথম মানুষ তিনি, স্রষ্টার প্রিয় তিনি,
প্রিয় পয়গম্বর, প্রিয় আদিম পিতা।
রক্তের উত্তরাধিকারী, উত্তরাধিকারী তাঁর বিশ্বাসের।
তাই জান্নাতে দেখা পাবো, পিতার মমতা পাবো,
স্বপ্নটা বেঁচে থাকে মনের কোণে।
আমি একজন শক্তিশালী মানুষকে চিনি,
যিনি সাহসের বাতিঘর ছিলেন।
রুখে দাঁড়িয়েছিলেন আপন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে,
দাঁড়িয়েছিলেন আপন পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ কি'বা
আরও দূর, দুরতম সমস্ত পূর্বপুরুষের
বংশপরম্পরায় ভোগ্য পৌরহিত্যের বিপরীতে।
তিনি আঙুল উঁচিয়েছিলেন দারুণ স্পর্ধায়
আর ধূলিস্যাৎ হয়ে গেলো সহস্রাব্দব্যাপী জেঁকে বসা
পৌত্তলিকতার অখণ্ড প্রস্তর মূর্তি।
সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানো শিশুটি,
বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলো ভীষণ জাঁকজমকে, আদরের আতিশয্যে।
অথচ রবকে চেনার চির সত্যের আকুলতায়,
সমস্ত রাজকীয় স্বাচ্ছন্দ্য হেলায় তুচ্ছ করে চলে গেলেন,
চলে গেলেন ক্ষুধা আর দারিদ্র্যকে দু'হাতে বরণ করে।
পৌত্তলিকতার শত ক্লেদাক্ত পঙ্কিলতা ছারখার হলো তাঁর আলোকপ্রাপ্ত হাতে।
রবের বন্ধু তিনি, আমার পিতাও তিনি,
প্রিয় পয়গম্বর ইব্রাহীম।
জান্নাতে দেখা পাবো, পিতার মমতা পাবো,
স্বপ্নটা বেঁচে থাকে সংগোপনে।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
৩০ জানুয়ারি ২০২২।