আতিক ইউএ খান:
বিএসসির ব্রিফিং দেখলাম। বলা হয়েছে,
- শিপে ১ মাসের অধিক খাবার মজুদ আছে। পানিরও সমস্যা নেই। নিহত থার্ড ইঞ্জিনিয়ার এর মরদেহ ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছে৷ সব ক্রুকে আপাতত শিপেই অবস্থান করতে হবে। কর্তৃপক্ষের গ্রিন সিগন্যাল না পাওয়া পর্যন্ত, শহরের চাইতে শিপেই নাবিকরা বেশী নিরাপদ। পরিস্থিতি নিরাপদ মনে করলে নাবিকদের সরিয়ে নেয়া হবে৷
এবার একটু বাস্তবতা বুঝার চেষ্টা করি। রকেট হামলায় শিপের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।
- নেভিগেশন সিস্টেম ধ্বংস হয়ে গেছে তাই সমুদ্রপথে আর বের হওয়া সম্ভব না।
- মেইন পাওয়ার জেনারেটর কাজ করছে না। শুধু ইমার্জেন্সি জেনারেটর কাজ করছে, সেটাও কতদিন করবে বলা মুশকিল।
- ইউক্রেনের বর্তমান তাপমাত্রা শূণ্যের কাছাকাছি। তাই পানি খুবই ঠান্ডা এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে তুষারপাতও হতে পারে।
শিপের হিটিং সিস্টেম কাজ করছে না। গরম পানির সিস্টেমও সম্ভবত কাজ করছে না।
একোমোডেশন বা রুমগুলোতে হিটিং নেই। তাছাড়া উপরে রকেট আরেকটা পড়ার সম্ভাবনা আছে। তাই সবাই ন্যুনতম পাওয়ারের মধ্যে ইঞ্জিন রুমে অবস্থান করছে, গাদাগাদি করে ঘুমাচ্ছে। বাথরুমের ফ্ল্যাশ আর পানির সিস্টেমও কাজ করছে কিনা নিশ্চিত না।
- সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার, রেফ্রিজারেটর কাজ না করলে শুকনা খাবার ছাড়া বাকি তরকারি, মাছ, মাংস, দুগ্ধজাত সব খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি সবই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া ডেড বডিতেও পচন ধরতে পারে।
- যতটুকু জানলাম, মূল জেনারেটর ফেল করায় রান্নার কাজে ব্যবহার করার যে ইলেকট্রিক চুলা, সেটাও কাজ করছে না। এখন ওরা কিভাবে রান্না করছে কিংবা আদৌ করতে পারছে কিনা নিশ্চিত নই।
- অগ্নি নির্বাপনের জন্য ব্যবহৃত হওয়া সব পানি ব্রিজ হতে নেমে শিপের বাসস্থানের এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে আছে যা এমুহূর্তে নিষ্কাশন করা বেশ কঠিন।
- জাহাজের বাইরে শহর যে নিরাপদ, তারও নিশ্চয়তা নেই। তাই বিএসসি নাবিকদের বাইরে নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছে। পোল্যান্ড বা অন্য কোন দেশের সীমান্ত পর্যন্ত নিরাপদ স্থানান্তর নিশ্চিত করা না গেলে নাবিকদের জাহাজ হতে সরানোর ঝুঁকি বিএসসি হয়ত নিতে চাইবে না। এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর অবস্থায় ইউক্রেন সরকারও নেই।
- বিএসসি ব্যাখ্যায় বলেছে, যেহেতু চার্টার পার্টি চুক্তিতে অপশন আছে, সেই অনুযায়ী Warzone Premium নিয়েই শিপটা ইউক্রেন গিয়েছে। দুঃখিত, বিএসসি’র এই ব্যাখ্যা সন্তোষজনক মনে হয়নি। অতিরিক্ত প্রিমিয়ামের জন্য ২৯ জন বাংলাদেশী নাবিকের জীবন মৃত্যু ঝুঁকিতে ঠেলে দেয়া কোন গ্রহণযোগ্য সমাধান হতে পারে না। সেটাও ইউক্রেন এলাকা Warzone হিসেবে ঘোষণার একসপ্তাহ পরে।
সকাল হতে বাংলার সমৃদ্ধিতে আটকে পড়া কয়েকজন নাবিকের মা, স্ত্রী, ভাই-বোন অনেকেই যোগাযোগ করেছেন, কথা বলেছেন। কি বলে সান্ত্বনা দিব বুঝতে পারছি না। অনিশ্চিত একটা পরিস্থিতি যার নিয়ন্ত্রণ আমাদের কারো হাতে নেই৷
আপাতত সরকার এবং বিএসসি তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারে আর আমরা ওদের জন্য দোয়া করতে পারি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ওদের হেফাজত করুন।
শিপের আরেকজন ক্যাডেট মৌ (বিএমএ ৫৪ ব্যাচ) এর বক্তব্য এবং শিপের কয়েকজন সিনিয়র অফিসারের ভিডিও বক্তব্য সংযুক্ত হল।
এমআই