যদি আবার দেখা হয়
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
সেই নড়বড়ে সাঁকোটার পাশে,
যদি আবার দেখা পাও তার, বছর তিরিশ পর।
হয়তোবা তার হাতে বাজারের ব্যাগ,
মুখের সামনে ওড়া সাদা কেশরাশি,
কাশফুল হয়ে যাবে মুহূর্তেই।
তোমার দুচোখ যেন নিষ্প্রভ, ক্ষীণদৃষ্টি,
হাতের লাঠির পরে ভর করে চলো।
তাকে দেখতে পেলে জ্বলে উঠবেই আলোহীন চোখদুটো অকস্মাৎ।
যদি আবার দেখা হয় বছর তিরিশ পর,
নড়েবড়ে সাঁকোটার পাশে।
সাঁকোটাকে চিনবেনা তুমি,
সেখানে মস্ত বড়ো ব্রিজ,
ইট, বালু আর সিমেন্টের মজবুত গাঁথুনি,
ভাঙবেনা তিরিশ বছর কেটে গেলেও।
অথচ সাঁকোর ঐ পারেই রয়েছে সে গ্রাম,
যেখানে তোমার ছিলো রমণীয় দিন,
সাদা কাশফুল মাথা লোকটির সাথে মসৃণ চলছিল নতুন জীবন।
নতুন সংসারে, নতুন মানুষ,পরিজন বেষ্টিত সুখের আসর।
তুমি ছিলে অকরুণ, উচ্চাশী মন,
একটু সহানুভূতি, একসাথে চলা, তোমার অভিধান জুড়ে ছিলো না কোথাও,
চিরকাল চেয়েছিলে আনকোরা সুখ, কষ্ট বর্জিত অবাধ জীবন।
কতজনা সংসারে দাবীদার থাকে,
কতো কি যে চাওয়া থাকে তোমাকেই ঘিরে,
তা কি ছিলো বাতুলতা, কেবলই কি ফাঁকি?
ভাবনায় জীবনটা শূন্যের ধোকা।
তোমার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে যে জন,
তারও বুকের মাঝে বৈশাখী ঝড়।
কতদিন কতো চাওয়া, ছেলেমানুষী,
তোমার অবোধ কতো আবদারে ভরা
হয়তো তোমার ছিলো উড়ু উড়ু মন,
হয়তোবা পরিজনে ছিলো রেষারেষি,
অথচ সে নির্দয়, ক্ষমাহীন হয়ে তোমাকেই চিরকাল একা করেছিল।
তারপর –
গল্পটা অতি পরিচিত।
নড়বড়ে সাঁকোটাকে পেরিয়ে এসেছো,
তিরিশ বছর হলো ফিরে আসোনি।
আজ যদি দেখা হলো এতদিন বাদে,
ছাড় দিতে না জানা মানুষের জোড়া,
বলতো বুকের মাঝে বইছে কি ঝড়?
হাহাকার, বঞ্চনা, অভিমানে ভরা।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২।