শারমিন ববি : তুরস্কে আড়াই ঘন্টা ট্রানজিট, নেদারল্যান্ডস টু বাংলাদেশ। ভাবলাম বসে না থেকে এয়ারপোর্ট টা একটু ঘুরে দেখি। সুবিশাল এয়ারপোর্ট এ কিছু পা হেটে যেতেই শুনতে পেলাম একটু দূরেই কিসের যেনো চেঁচামেচি। আমি একটু অবাক হলাম, কারণ ইউরোপের লোকজন কে কোথাও তো এমন জটলা পাকিয়ে ঝগড়া করতে দেখিনি। বাঙালি স্বভাবসুলভ কৌতুহলী চোখ নিয়ে উন্নত দেশের ঝগড়া দেখার নেশায় সামনে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি এনারা সবাই বাংলাদেশি
।
ঝগড়ার হেতু, এক বাংলাদেশি ভাইয়ার লাগেজ আরেক বাংলাদেশি আপুর লাগেজ কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে, জেন্টস লাগেজ টাই দুষ্ট ছিল
। এজন্যই আপুটা বাংলিশ চিতকার চেচামেচি করছিল।
স্বজাতির ঝগড়া দেখে মজা নেই, ছোটবেলা থেকে পাশের বাসার ঝগড়া শুনে শুনেই মানুষ আমরা
আফটার ট্রানজিট কেবল প্লেনে উঠে বসেছি, শুরু হল অন্য দুই বাংলাদেশি ভাইয়ার ঝগড়া। একজনের লাগেজ আরেকজনের লাগেজ কে জায়গা দিচ্ছেনা। একই জায়গা দাবি করছে দুইজন।
কেবিন ক্রু কোন মতন ম্যানেজ করেছে বিষয় টা। শান্তিতেই উড়ছে প্লেন। এবার খাবার পরিবেশন শুরু হল। আমার পেছনের সিটে বসা একজন মনের সুখে জুস, ওয়াইন, চা, রাইস,পাস্তা, সব একসাথে অর্ডার করা শুরু করল। পাশের ভাইয়া বলে উঠল " নিশ্চয় ইতালি তে কাজ করেন, দেখেই বোঝা যাচ্ছে। একটু প্রেস্টিজ বজায় রেখে বুঝেশুনে খাবার অর্ডার করুন"। এটা সৌদি আরবের লোকাল প্লেন না এটা তার্কিশ, এভাবে একসাথে সব খাবার কেও চায় নাকি? শুরু হয়ে গেল আবার...
তাদের কথা কাটাকাটি চলতেই থাকল, কে কত বছর বিদেশ ছিল, কে কত ম্যানার জানেন, দেশে কার কত ক্ষমতাধর মামা চাচা ভাই বোন আছে এই টাইপ। প্লেন থেকে নেমে একজন আরেকজন কে দেখে নেবে!!
এমন ঝগড়া দেখে খুব একটা অশান্তি হচ্ছিলনা কারন ময়মনসিংহ -ঢাকা ট্রেনে যাতায়াতে ঝগড়ার সব কালার আমার জানা আছে।
আট ঘন্টা ফ্লাই করার পর প্লেন ল্যান্ড করবে। কিন্তু ঘটল এক বিপত্তি!!!
আমি লাইভ দেখছিলাম, হঠাত দেখি ল্যান্ড করার ৫ মিনিট বাকি আছে কিন্তু প্লেন আবার নয়াদিল্লীর দিকে যাচ্ছে। তার সাথে বার বার ঝাকুনি দিচ্ছে। লাইভ দেখে মনে হচ্ছিল পাইলট বার বার ল্যান্ড করানোর চেষ্টা করছেন আবার কোন কারনে টার্ন নিচ্ছেন। সবাই বুঝে গেল কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে। হঠাত করে দেখি যারা এতক্ষণ ঝগড়া করছিলেন তারা একজন আরেকজনের সাথে ভাল ব্যবহার করছেন। এবং উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করছেন। দা - কুমড়া সম্পর্ককে হঠাত আলু-পটল হতে দেখে খুব হাসি পাচ্ছিল। মৃত্যু ভয় কত সহজেই মানুষের আচরণ পালটে দিতে পারে! সব স্বার্থ, অহংবোধ, ক্ষমতা পরাজিত এই একটা বাস্তবতায়।
অজানা এক আশংকা তাদের মিলিয়ে দিয়েছিল। আমি মনে মনে সেই ঝগড়ালী আপুটাকে খুজছিলাম, উনি কি ল্যান্ড করার পর সেই ভুক্তভোগী ভাইয়াটাকে স্যরি বলেছিল? বাঙালী যতই নিজেদের ভেতর ঝগড়া ঝাটি করুক বিপদে সবাই এক। আর নিজেদের মধ্যে ব্যাপারটাই আলাদা, আমরা আমরাই তো
বি:দ্র: ঝড়ের কারনে প্লেন ল্যান্ড না করতে পেরে ৫০ মিনিট আমাদের বাংলাদেশের আশেপাশে উড়তে হয়েছিল।
অতঃপর, প্লেন ভালমতই ল্যান্ড করেছিল।