ওই পারে সব ঢেউ
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
নদীর বুকে আগল তুলে, বাঁধ দিয়েছে কেউ,
এপার কাঁদে তেষ্টা বুকে, ওইপারে সব ঢেউ।
এপার জুড়ে, নদীর পরে, শুকনো বালুর চর,
সেথায় এখন, উইয়ের ঢিপি, লাল পিঁপড়ের ঘর।
মাছের গল্প, শুনেছে অল্প, ওইপারে থাকে যারা,
সতেজ লতা, দুর্লভ সেথা, ক্ষুধায় অন্নহারা।
আদ্যিকালের জেলের গুষ্টি, মাছে-ভাতে ছিলো বাস,
ছোটখাটো মাছ, নদীতে ফেরত, বড় মাছে ছিলো আশ।
মাছের কোপ্তা, মাছের কালিয়া, মাছের পোলাও দিয়ে,
দূরের পথিক, পাত পেড়ে দিতো, কলার পাতা বিছিয়ে।
বোয়াল মাছের চোয়াল কাটতে, হেরে যেতো পুর নারী,
ওসব কর্ম পুরুষের ছিলো, শক্তপোক্ত ভারি।
এ পাড়ার যত উটকো ছেলেরা, ঝাপাতো গাঙের ঢেউয়ে,
পাড়ি দিতো দূরে, ঝঞ্ঝার দিনে, একটুকু খেয়া নাওয়ে।
এসব কাহিনী আজগুবি যেন, আজকে যাদের বাস,
নদীর এইপারে পানিশূন্যতা, মরুভূমি, হাঁসফাঁস।
মাটির কলিজা ফেটে চৌচির, এতটুকু নেই প্রাণ,
সবুজ বনানী, কলমির গোছা, উধাও গাঙের দান।
কচুরিপানায় গুগলি শামুক, হাবুডুবু বালিহাঁস,
ভোজবাজি যেন, হারিয়েছে সব, এপারে সর্বনাশ।
আহারে পদ্মা, কপোতাক্ষ, ধু ধু বুক নিয়ে কাঁদে,
তিস্তার দেহ, হাড় জিরজিরে, পানি শুষে নেয়া ফাঁদে।
ওপারে, অথৈ স্রোতের দোলায়, চলেছে প্রমোদতরী,
অর্ধেক নদী ঢেউয়ে উত্তাল, অর্ধেক মরি মরি।
প্রকৃতির বুকে বাঁধ দিয়ে যারা প্রকৃতিরে করে দাস,
বিধাতার হাতে, আগামীর পথে তাদেরই সর্বনাশ।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
১২ মার্চ ২০২২।