ইসাহাক আলী, নাটোর: নাটোরের একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করার দুই ঘন্টা পর সবুজ আহমেদ (২১) নামে মাদকাসক্ত যুবকের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারের দাবি নাটোর রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তির পর চিকিৎসার নামে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে রিহ্যাব সেন্টার কর্তৃপক্ষ এমন অভিযোগ অস্বীকার করে , অতিরিক্ত ও বিষাক্ত মদ পানের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
নিহত যুবক শহরের ভবানীগঞ্জ মহল্লার জাঙ্গাঙ্গীর আলমের ছেলে ।
রবিবার রাতে শহরের হরিশপুরে অবস্থিত নাটোর রিহ্যাব সেন্টার নামের মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে। চিকিৎসার জন্য রাত ৯ টায় ওই রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি হওয়ার দুই ঘন্টা পর ওই যুবকের মৃত্যু হয়। সবুজকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার।
খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে। অতিরিক্ত বা বিষাক্ত মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে বিষক্রিয়ায় তার
মৃত্যু হতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করছে পুলিশ। তবে নির্যাতন বা অতিরিক্ত মাদক সেবনে তার মৃত্যু হয়েছে কিনা দুটিকে প্রাধান্য দিয়ে অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি মনছুর রহমান।
সবুজের পরিবার জানায়, সবুজ নিয়মিত মাদক সেবন করত। রোববার রাতে সে মাদক সেবন করে বাসায় ফিরে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে অশোভন আচরণ শুরু করেন। মাদকাসক্ত অবস্থায় সবুজকে রবিবার রাত ৯ টায় নাটোর রিহ্যাব সেন্টারে
চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় তার সহোদর ভাই সজিব ও শাওন । সেখানে ভর্তির পর সবুজ বমি করতে থাকে। ভর্তির দুইঘন্টা পরে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ তাদেরকে মোবাইল ফোনে নাটোর আধুনিক হাসপাতালে যেতে বলে। পরে হাসপাতালে গিয়ে সবুজের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন তারা। এ সময় মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের অনেকেই হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন ।
নিহতের সহোদর দুই ভাই সজীব ও শাওন জানান, ভর্তি করার দুই ঘণ্টা পর সবুজের মৃত্যু রহস্যজনক। সে মাদকাসক্ত হলেও খুব খারাপ অবস্থায় ছিল না। রিহ্যাব সেন্টারে ভুল চিকিৎসা হয়েছে। তাকে মারধরও করেছে তারা।
নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মো. সোহরাব আলী সম্রাট সবুজকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত যুবক সবুজকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় বলেও তিনি জানান।
এদিকে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের ইনচার্জ জাঙ্গাঙ্গীর আলম ও কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন জানান, গত ৬ মাস আগে সবুজের বড় ভাই সজিব এই নাটোর রিহ্যাব সেন্টারে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। একটি গোষ্ঠী এই রিহ্যাব সেন্টারের সুনাম ক্ষুন্ন করতে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। সবুজের সেন্টারে আসা থেকে শুরু করে সব কিছুর সিসি টিভি ফুটেজ আছে। তাকে নির্যাতন বা অপচিকিৎসা দেয়া হয়নি । সেটা দেখলেই পরিস্কার বোঝা যাবে, সবুজ কি ভাবে মারা গেছে ।
নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মনছুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অতিরিক্ত বা বিষাক্ত মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হতে পারে। তবে পরিবারের দাবি নির্যাতন তা আরো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে নিহতের কারণ জানা যাবে।
তিনি আরো জানান, এ বিষয়ে সবুজের পরিবার এখনও থানায় কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এম্আই