মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটী টুঙ্গিপাড়া এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর অধীনে ৫নং পোল্ডারের পশ্চিম দূর্গাবাটি এলাকায় প্রায় আশি ফুট জায়গা খোলপেটুয়া নদীতে ধ্বসে গেছে।
মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে নদীতে ভাটা শুরু হওয়ার পরপরই ওই ঘটনা ঘটে। বাঁধের ধ্বস ক্রমশঃ তীব্র আকার ধারন করায় আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ওই এলাকায় বসবাসকারি সাধারণ জনগণ।
এদিকে শ্যামনগর উপজেলাকে ঘিরে থাকা উপকূল রক্ষা বাঁধের পশ্চিম দূর্গাবাটি এলাকায় ধ্বস লাগার খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
দিনের শেষ ভাটায় আরো মারাত্মক কিছু ঘটনার আশঙ্কায় পাউবো’র সহায়তা নিয়ে স্থানীয়রা সকাল থেকে ভাঙ্গন কবলিত অংশের বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করতে থাকেন।
এদিকে, গত মঙ্গলবার দুপুরে খোলপেটুয়া নদীর দয়ারঘাটের দু’টি ও আশাশুনির তিনটি পয়েন্টে রিংবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢোকে।রাতে মধ্যে এই বাঁধ মেরামত করা না গেলে আরো বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হত।
স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আশাশুনি সদর ইউনিয়নের ১০টি পয়েন্টে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গোটা ইউনিয়ন
প্লাবিত হয়েছিল। তখন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে আটটি পয়েন্টে পাউবো’র বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হলেও দুটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। ওই দুটি পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ দিয়ে কোন মতে পানি আটকানো হয়। সোমবার দুপুরের জোয়ারে এই রিং
বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিলে স্থানীয় ভাবে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তা মেরাতম করা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে নদীতে অতিরিক্ত জোয়ার আরো বৃদ্ধি পেলে ওই বাঁধ আর ঠেকানো যায়নি।
দয়ারঘাটের দু’টি ও আশাশুনির তিনটি পয়েন্টে রিংবাঁধ ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে। এখনো এলাকায় পানি ঢুকছে। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। আশাশুনি উপজেলা সদরের জনতা ব্যাংকের সামনে দিয়ে নদীর জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বাজার ও দোকান পাট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে আশাশুনি সদর এখন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।
আশাশুনি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজা মিলন জানান, গত পূর্ণীমার জোয়ারের সময় দু’টি পয়েন্টে ভাঙ্গে যায়। আমরা স্থানীয়ভাবে সেটি মেরামত করেছিলাম। এবার জোয়ারে এই বিকল্প রিং বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে এমন আশংকা করে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করেছিলাম। সম্প্রতি পানি উন্ন্য়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল
ইসলাম সাহেব এই এলাকা পরিদর্শনকালে তাকে আমরা বলার পর তিনি দ্রুত এই বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু
প্রশ্রুতি অনুযায়ি পূর্নীমার আগে বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।
গতকাল আমরা নিজেরা এই বাঁধে কাজ করেছিলাম। কিন্তু অস্বাভাবিক জোয়েরর কারনে এই বাঁধ রক্ষা করা যায়নি।
মঙ্গলবার দুপুরের জোয়ারে বাঁধ ভেঙ্গে দয়ারঘাট ও আশাশুনিতে রিংবাধ ভেঙ্গে শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এতে করে আশাশুনি সদর ইউনিয়নের মানুষের জান মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর অধীনে ৫ নম্বর পোল্ডারের দুর্গাবাটি ও
পোড়াকাটলা এলাকার বাঁধ দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গনমুখে রয়েছে। একাধিকবার জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ জিও ব্যাগ প্লেসিং সত্ত্বেও ওই অংশের নদীর চর আগে থেকে দেবে যাওয়ার সেখানে ভাঙ্গন নিত্যকার বিষয়ে পরিনত হয়েছে।
এছাড়া সম্প্রতি ওই এলাকা থেকে প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে ড্রেজিং মেশিনের সহায়তায় লক্ষ লক্ষ ঘনফুট বালু
উত্তোলনের কারণে সমগ্র এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল বলেন, দীর্ঘদিন পাউবো কর্মকর্তারা মাপ জরিপ চালাচ্ছে। নামমাত্র কিছু কাজও হয়েছে। স্থানীয়ভাবে বেড়িবাঁধের কাজ করতে গিয়ে জোড়াতালি দিয়ে কাজ শেষ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও শাহনাজ পারভীন বলেন, শ্যামনগরে যে ২৩টি স্থানে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ, তা চিহ্নিত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। যে জায়গাটি ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে সেটি জাইকার একটি উপ প্রকল্পের আওতাধীন ১০
কিলোমিটারের মধ্যে পড়ে। টেন্ডার ওপেন হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। ঠিকাদান নিয়োগ হলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, দাতিনাখালিতে আরও দুটি পয়েন্টের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে একটি পয়েন্টে কাজ শুরু হয়েছে।
স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য ডালিম কুমার ঘরামি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয় মানুষের। জনগণের জান মালা রক্ষায় উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সুরক্ষিত করার পরিকল্পনাটি আগে দরকার।
পশ্চিম দুর্গাবাটি এলাকার বাঁধের ভাঙ্গন নিয়ে পাউবো’র শ্যামনগর অঞ্চলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদুজ্জামান বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে জিও ব্যাগে মাটি ভর্তি করে ভাঙ্গন কবলিত অংশে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। নদীর ওই অংশে স্কাউরিংয়ের মাত্রা বেশি হওয়ায় বার বার ওই এলাকা ভাঙ্গছে বলেও তিনি দাবি করেন।
ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম আতাউল হক দোলন বলেন, ভাঙ্গনকবলিত এলাকায় পাউবো’র তত্ত্বাবধায়নে বিকল্প রিং বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। সাতক্ষীরা
সময় জার্নাল/এমআই