বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

সাহাবুদ্দিন আহমদকে বাংলাদেশ মনে রাখবে বহুদিন

শনিবার, মার্চ ১৯, ২০২২
সাহাবুদ্দিন আহমদকে বাংলাদেশ মনে রাখবে বহুদিন

ডা. রাসেল চৌধুরি: 

১৯৯০ সালে আমার বয়স মোটে ১০ বছর। ক্লাশ ফাইভে পড়ি। তখন এই ধরায় মোবাইল আসে নাই, এই ভূখন্ডে আজ্ঞাবহ বিটিভি ছাড়া আর কোনো টিভি চ্যানেল ছিলো না। প্রতিদিন বাসায় পত্রিকা রাখা হয় না। মাঝে মাঝে পত্রিকা বা কিছু ম্যাগাজিন পড়ার সময় পেতাম।। মোবাইল আর ফেসবুকহীন সেই কিশোর বয়সেও তারপরও রাজনীতির খবর আমায় টানতো। শুধু আমায় না, সেই বয়সী আমাদের প্রায় সবাইকে টানতো। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের কারণে দিনের পর দিন হরতাল চলেছে৷ স্কুলে ঠিকমতো ক্লাশ হয় না। বিটিভিতে সারাদিন সিনেমা নাটক দেখায়, যাতে মানুষ ঘরে থাকে।  কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। অলিতে গলিতে সারাদিন মিছিল আর মিছিল। না, বিরিয়ানির প্যাকেটের লোভে সহমত ভাইদের মিছিল নয়। সত্যিকারের আদর্শিক দাবি আদায়ের মিছিল।

এরশাদের নামের সাথে স্বৈরাচার শব্দ এমনভাবে জুড়ে গিয়েছিলো যে, সকল শিক্ষার্থী আর সাধারণ মানুষের এতো ঘৃণা বোধ হয় এদেশের আর কোনো রাষ্ট্রপ্রধান পাননি। অবশেষে এরশাদের পতন হলো। সেই রাতের কথা আমার এখনো মনে পড়ে। মনে হলো নূর হোসেনের রক্তের ঋণ শোধ করে পুরো দেশ আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ছিলো। তারপর জানা গেলো, একজন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি নিয়োগ পেয়েছেন। ছোটোখাটো শরীরের আত্মপ্রত্যয়ী তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি জাতির উদ্দেশ্যে অসাধারণ ভাষণ দিলেন। 

সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, স্বস্ব ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ করলেন৷ বোঝা গেলো, তিনি আগের সব সামরিক আজ্ঞাবহ রাষ্ট্রপতি যেমনঃ বিচারপতি সায়েম বা সাত্তারের মতো উচ্চাভিলাষী নন। তিনি জনপ্রতিনিধিদের হাতে দ্রুততম সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তরকে একনম্বর এজেন্ডা বানালেন। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের আবহ তৈরি করলেন। বিটিভি জন্মলগ্নের পর প্রথম নিজের মতো করে কথা বলতে লাগলো।  অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলো। তিনি কিন্তু তখনো রাষ্ট্রপতি এবং ক্ষমতা তাঁর হাতেই কেন্দ্রীভূত। তিনি গণতান্ত্রিক ধারায় জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার প্রতিষ্ঠার আহবান জানালেন। এবং শেষ পর্যন্ত সর্বসম্মতিক্রমে তাই প্রতিষ্ঠা পেলো।

তিনি ফিরে গেলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পদে। এরপর অবশ্য ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। কিন্তু পুরোটা সময় এতো সাধারণ আর অনাড়ম্বর জীবন কাটিয়েছেন, যেটা আজো সবার স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করছে।

এরপর তিনি আড়ালে চলে গেলেন এবং পুরো দুই দশকের বেশি সময় আড়ালেই থাকলেন। এদেশে যেখানে সামান্য খ্যাতি পেলেই মানুষ নিজেকে দশভূজা মনে করে, সেখানে তিনি যাপন করে গেলেন এক নিভৃত জীবন। কখনো আর গণমাধ্যমে আসেননি, আসেননি কোনো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে। এমনকি কারো কাছ থেকে নেননি কোনো পুরষ্কার। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ প্রমাণ করে গেছেন, নিজের পরিধির বাইরে গিয়ে খুব বেশি ধরনের এলেবেলে কাজ করার চেয়ে নিজের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী কিছু কাজ করে গেলেই অমর হওয়া যায়। তিনি সেরা বিচারপতি ছিলেন, সেরা অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি ছিলেন। 
বাংলাদেশ তাঁকে মনে রাখবে বহুদিন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ রাজনীতি না করেও সকল রাজনীতিকের জন্য অনুকরণীয় রাজনৈতিক দর্শন রেখে গেছেন। 

বিদায় রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। এ গ্রেট স্যালুট টু ইউ।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল