আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
১৩২ আরোহী নিয়ে দুর্ঘটনার শিকার চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে শব্দের গতির কাছাকাছি গতিতে চলছিল। এরপরই একপর্যায়ে সেটি চীনের দক্ষিণাঞ্চলের গুয়াংশি অঞ্চলের দুর্গম পাহাড়ে আছড়ে পড়ে। ফ্লাইট-ট্র্যাক ডেটা পর্যালোচনা করে বুধবার (২৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ নিউজ।
চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের এই বিমানটিতে ১৩২ জন আরোহী ছিলেন এবং দুর্ঘটনার পর তাদের কেউই বেঁচে নেই বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্লুমবার্গ বলছে, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কোনো ফ্লাইটের শব্দের গতিতে ভ্রমণকে (দুর্ঘটনার পর) তদন্তকারীদের কাজকে বেশ জটিল করে তুলতে পারে। কারণ এটি (শব্দের গতিতে চলাচল) প্রমাণ মুছে ফেলতে পারে এবং বিরল হলেও এটি বিমানের ডেটা ও ভয়েস রেকর্ডারগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদিও এসব সরঞ্জাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনা সহনীয় হিসেবেই ডিজাইন করা হয়েছে।
আকাশপথে ভ্রমণরত ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ‘ফ্লাইটরাডার২৪’ এর তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংশি অঞ্চলের দুর্গম পাহাড়ে বিধ্বস্ত হওয়া চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের এই বিমানটি প্রতি ঘণ্টায় ৬৪০ মাইলেরও (৯৬৬ কিলোমিটার) বেশি বেগে বাতাসের মধ্যে ছুটে চলছিল। এমনকি কখনো কখনো বিমানটির গতি ঘণ্টায় ৭০০ মাইল অতিক্রম করেছিল বলেও জানিয়েছে ওয়েবসাইটটি।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অ্যাস্ট্রোনটিক্স এবং অ্যারোনটিক্সের অধ্যাপক জন হ্যানসম্যান চীনা বিমানের গতি সম্পর্কে ব্লুমবার্গের হিসাবটি পর্যালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বিধ্বস্ত হওয়ার আগে বিমানটি শব্দের গতির কাছাকাছি গতিতে ভ্রমণ করছিল বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এটি খাড়াভাবে নিচের দিকে নেমে আসছিল।’
ব্লুমবার্গ বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠে শব্দের প্রতি ঘণ্টায় ৭৬১ মাইল হলেও উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাতাসের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শব্দের গতি ধীর হয়ে যায়। আর তাই ৩৫ হাজার ফুট (১০ হাজার ৬৬৮ মিটার) উচ্চতায় শব্দের গতি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৬৬৩ মাইল।
এর আগে ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানটির বিধ্বস্তের ভয়ঙ্কর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানটি গুয়াংশির উঝৌ এলাকার আকাশে ৩ হাজার ২২৫ ফুট উচ্চতায় চলার সময় আচমকা পাহাড়ে আছড়ে পড়ছে।
এ সময় বিমানটি একেবারে খাড়াভাবে অর্থাৎ বিমানের সামনের অংশ নিম্নমুখী ও পেছনের অংশ আকাশের দিকে থাকা অবস্থায় নিচে পড়ে যায় এবং অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিধ্বস্ত হয়।
চীনের বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রশাসন (সিএএসি) জানায়, এমইউ৫৭৩৫ ফ্লাইটটি চীনের কুনমিং শহর থেকে গুয়াংঝুতে যাচ্ছিল। গুয়াংশি অঞ্চলের উঝৌ এলাকার আকাশে থাকাকালীন বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বিমানটিতে ১২৩ জন যাত্রী এবং ৯ জন ক্রু ছিলেন। যদিও চীনের সরকারি গণমাধ্যমের খবরে বিধ্বস্ত বিমানে ১৩৩ জন ছিলেন বলে জানানো হয়েছে।
এমআই