এসো তবে
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
এখানেই ছিলো সেই বিস্তীর্ণ জঙ্গল,
মাইলের পর মাইল হেঁটে গেলেও
তার সবুজ কখনো শেষ হতোনা।
অজস্র জন্তুর আবাসস্থল,
যারা অত্যাচারিত না হলে কখনো লোকালয়ে আসেনা।
কারা যেন লোকালয় ছেড়ে এসে জঙ্গলে হানা দিলো
আর সবুজ হারিয়ে গিয়ে দগদগে ক্ষতচিহ্নের মতো বেরিয়ে এলো,
ধূসর, রুক্ষ কিছু প্রাণহীন ভূমি।
উন্মুক্ত হলো বনভূমির নগ্নতা,
লোপাট হলো তার নির্জনতা।
তোমরা কেউ তো এখনো জেগে আছো?
এসো তবে,
হাতে তুলে নেই কাস্তে-কোদাল আর ঝাঁঝর ভরা পানি।
চলো বীজ বুনে দেই।
আবার ঢেকে দেই বনভূমির নগ্নতা।
ওরা হাতে গোনা মাত্র ক'জনা,
আমরা অসংখ্য।
যদি একবার হাতগুলো একত্রিত করি,
মুছবেনা ক্ষতচিহ্নগুলো?
এখানেই ছিলো সেই পাহাড়টা,
মস্ত বড়ো সেই পাহাড়টা,
যার চূড়ায় উঠলে যেন মেঘ ছোঁয়া যেতো।
কারা যেন সমভূমি পেরিয়ে এলো
আর পাহাড় ভেঙে করতে চাইলো সমভূমি।
তাদের মনে তখন দালান গড়ার স্বপ্ন,
পাহাড়ের বিশালতা মুছে দিয়ে বড়ো বড়ো বাণিজ্যিক দালান।
তোমরা কেউ তো এখনো জেগে আছো?
এসো তবে,
হাতে তুলে নেই সেই পাহাড় গড়ার কাজ।
যদি একবার দাঁড়িয়ে যাই পাহাড়ের পাশে, সমবেতভাবে,
থামবেনা অহেতুক দালানের বোঝা?
এখানেই ছিলো সেই নদীটা,
মোহনীয়, খরস্রোতা নদীটা।
অসংখ্য মৎস্যজীবী আর কাব্যের সিদ্ধি হয়ে,
অজস্র মানুষের আবেগের সওয়ারি হয়ে।
কারা যেন নদীর অর্ধেকটা ঢেকে দিয়ে বসিয়ে দিলো দোকানঘর,
প্রমত্তা ঢেউকে বেঁধে দিয়ে শুরু হলো ব্যাবসাপাতি।
তোমরা কেউ তো এখনো জেগে আছো?
এসো তবে,
হাতে তুলে নেই বাঁশ-লাঠি, থালা-বাটি, যা পাই।
সবাই মিলে যদি পরিচ্ছন্ন করে তুলি নদীর দু'পাড়,
দেশটা আবার হয়ে যাবেনা নদীমাতৃক?
আমরা অসংখ্য, কোটির ঘর পেরিয়ে এসেছি সেই কবে।
এতগুলো ঘুমভাঙা হাত যদি উত্তোলিত হয়,
প্রকৃতির ঋণ বুঝি শোধ হয়ে যাবে,
শুধু যদি একবার একতাবদ্ধ হই দেশটাকে ভালোবেসে।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২।